কক্সবাজারের চকরিয়ায় সোসাইটি বায়তুল মাওয়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণের আগেই নতুন কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে মসজিদ পরিচালনা কমিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও চকরিয়া পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন আলমগীর চৌধুরী সহ উভয়পক্ষের অন্তত ৬ জন মুসল্লি আহত হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চকরিয়া জুড়ে আওয়ামিলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পৌর আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন আলমগীর চৌধুরী এবং সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জয়নাল আবেদীনসহ ৬ জনকে রক্তাক্ত জখম করার ঘটনায় থানা রাস্তার মাথাস্থ সিস্টেম কমপ্লেক্সেের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে চকরিয়া উপজেলা এবং পৌর আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ প্রতিবাদ সভায় চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটুর সভাপতিত্বে ও হামলায় আহত চকরিয়া পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক লায়ন আলমগীর চৌধুরীর উপস্থিতিতে প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চকরিয়া-পেকুয়ার সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামিলীগের সাধারন সম্পাদক আবু মুছা সহ ছৈয়দ আলম কমিশনার, চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালী, চেয়ারম্যান জামাল চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর মোঃ আইয়ুব প্রমুখ। এসময় মসজিদের কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণের আগেই নতুন পরিচালনা কমিটি ঘোষণ করা হচ্ছে বলে দাবী করেন বক্তারা। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চকরিয়া পৌরশহরের সোসাইটি বায়তুল মাওয়া শাহী জামে মসজিদের কমিটিতে আধিপত্যকে কেন্দ্র করে এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চকরিয়া পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক লায়ন আলমগীর চৌধুরী সহ ৬ জন আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। মসজিদের সামনে বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য অবস্থান করেন। এ ঘটনায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে পৌরশহর জুড়ে। মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিরা জানান, এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সোসাইটি বায়তুল মাওয়া শাহী জামে মসজিদের খতিব হাফেজ বশির আহমদ ওয়াজ শেষ করার পরপরই স্পিকারে বক্তব্য দিতে উঠেন নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শহীদ। ওই সময় তাকে বাধা দেন বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়ন আলমগীর চৌধুরী। এতে মুসল্লিদের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে শহিদুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়ন আলমগীর চৌধুরী ও সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জয়নাল আবেদীনকে মসজিদের ভেতরে মারধর করেন। এসময় মুসল্লিরা দিকবেদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। এ হামলায় অন্তত ৬ জন আহত হয়। তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.ফখরুল ইসলাম মসজিদে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সকল মুসল্লিকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান। পরে আধা ঘণ্টা পর পুনরায় খুতবা ও জুমার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। মসজিদে হামলার ঘটনায় আহতরা হলেন, মসজিদ পরিচালনা কমিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক লায়ন আলমগীর চৌধুরী, সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জয়নাল আবেদীন, পৌর যুবলীগ সভাপতি হাসানগীর হোছাইন ও জহিরুল ইসলাম। এসময় চকরিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৮নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুজিবুল হক সোসাইটি বায়তুল মাওয়া শাহী জামে মসজিদ পরিচালনার জন্য নতুন কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোছাইন ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শহীদসহ ২৫ সদস্য বৈশিষ্ট্য কমিটি ঘোষণা করেন। এদিকে লায়ন আলমগীর চৌধুরীর উপর ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে সিস্টেম কমপ্লেক্সস্থ এরিস্টো ডাইন রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করেন সোসাইটি বায়তুল মাওয়া শাহী জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ নাসির উদ্দিন। মসজিদের পবিত্রতা ও সুনাম নষ্টকারীদের আইনের আওতায় আনারও দাবী জানান তারা। কক্সবাজার সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়ার সার্কেল) রকীব উর রাজা বলেন, চকরিয়া পৌরশহরে মসজিদের ভেতরে মুসল্লিদের মধ্যে মারামারি ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরিবেশ শান্ত করার পর পুনরায় জুমার নামাজ আদায় করা হয়। কেউ অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম বলেন, মসজিদ হচ্ছে মুসলমানদের পবিত্র স্থান। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা ইবাদত করি। অথচ মসজিদের ভেতরে কমিটি গঠন নিয়ে হামলা ঘটনা ঘটিয়ে অন্যায় কাজ করেছে। কমিটি গঠন নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ থাকলে লিখিত ভাবে জানাতে পারে। আইন হাতে নেওয়া অপরাধ। এসময় তিনি উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার ও আহ্বান জানান তিনি।
Leave a Reply