চকরিয়ার বদরখালী বাজারে উম্মে হাবিবা নামের এক ভূয়া চিকিৎসক প্রতিনিয়ত প্রসূতি-নবজাতকসহ সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে খেলা। গাইনী ও প্রসূতিবিদ্যার উপর তার কোন ধরনের ডিগ্রি না থাকলেও অনেক বড় গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তিনি।
বদরখালী বাজারের প্রধান সড়কের একটি পাকা ভবনের পুরো একটি ফ্ল্যাটে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা হোম নামের ডেলিভারি সেন্টার খুলে ভুয়া চিকিৎসক উম্মে হাবিবা নিজেকে বিশেষ অভিজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয়ে প্রসূতিদের অস্ত্রোপচারসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করে আসছেন। এমনটিই অভিযোগ ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের। পরে বদরখালী বাজারে সরেজমিন গেলে মেলে তার সত্যতা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১ বছরে তার ভুল চিকিৎসায় ৬ জনেরও অধিক প্রসূতি মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, চিকিৎসা বিদ্যায় অযোগ্য হলেও যোগ্যদের বেশ ধরে চকচকে সাইন বোর্ড সাঁটিয়ে মানুষের জীবন নিয়ে বাণিজ্য করতে গরিব অসহায় ডেলিভারি রোগীদের অপ্রয়োজনীয় সিজার করার ঝুঁকিও নেন তিনি। তার ভুল চিকিৎসার কারণে মা হারিয়েছে নবজাতক শিশু, নবজাতক শিশু হারিয়েছে মা। বাসাভাড়া নিয়ে সেটিকে চেম্বার ও ক্লিনিক বানিয়ে শয্যা বসিয়েছেন। সম্প্রতি সময়ে উম্মে হাবিবা ডেলিভারি সেন্টারে অস্ত্রোপচার করে বাচ্চা বের করতে গিয়ে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের তিতা মাঝির পাড়া এলাকার আবুল হোসেনের স্ত্রী রহিমা বেগম নামের এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটিয়েছে। এছাড়াও কালারমারছড়া ইউনিয়নের সুমনের স্ত্রী হালিমা বেগম , বদরখালী ইউনিয়নের মনজুর আলমের স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে তার ভুল চিকিৎসায়। এদিকে, বদরখালী ইউনিয়নের কালুর স্ত্রী বেঁচে থাকলেও তার ফুটফুটে শিশুর মৃত্যু হয় ভুল ডেলিভারির কারণে। সর্বশেষ তার ভুল চিকিৎসায় গত ২৬ মে মহেশখালী ধলঘাটা মুহুরীঘোনা এলাকার পারভেজ হায়দার হিরুর নবজাতক সন্তানের মৃত্যু হয়। তাছাড়া, এ ভুয়া চিকিৎসক উম্মে হাবিবের বিরুদ্ধে অসংখ্য লিখিত এবং মৌখিক অভিযোগ রয়েছে। কোন ভুক্তভোগী পরিবারের গর্ভবতী স্ত্রী বা নবজাতক সন্তানের মৃত্যুর পর প্রতিবাদ করলে উল্টো হুমকিধামকি দিয়ে বের করে দেন বলে জানান ভুক্তভোগীদের কয়েকজন। এদিকে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন তার চেম্বারের গেলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে চেম্বার থেকে চটকে পড়েন তিনি। এরপরও নাছোড়বান্দা সাংবাদিকরা তার আসার অপেক্ষায় ওই চেম্বারে বসে থাকলে কিছুক্ষণ পর ভুয়া চিকিৎসক উম্মে হাবিবা’র স্বামী বদরখালী বাজারের ফার্মেসি দোকানদার নাসির উদ্দিন এসে বলেন তার স্ত্রী চকরিয়া শহরে অবস্থান করছেন। আসতে রাত হবে। কী বলতে হবে আমার সাথে বলেন। তখন তার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে নাসির উদ্দিন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অনুমতি নিয়েই ডেলিভারি সেন্টার চালু করা হয়েছে। কথা বলার এক ফাঁকে উম্মে হাবিবার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি প্রশিক্ষণের কাজে ব্যস্ত আছে জানিয়ে ফোন কেটে দেন। এবিষয়ে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শোভন দত্তের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি, উম্মে হাবিবা নামের ওই ভুয়া চিকিৎসককে ডেলিভারি সেন্টার খোলার জন্য কোন ধরনের অনুমতি দেননি বলে জানান। সম্প্রতি তার চেম্বারে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছিলো। এরপর স্থান পরিবর্তন করে পুনরায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে চেম্বার ও ডেলিভারি সেন্টার খুলে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। যা খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। অন্যদিকে, কক্সবাজার জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ নোবেল কুমার বড়ুয়া জানান, এ বিষয়ে আমার সঠিক জানা নেই। বিষয়টি আপনার বরাত দিয়ে জেনেছি। সংশ্লিষ্ট উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হবে এবং ওই ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে।
Leave a Reply