কক্সবাজারের চকরিয়ায় পূর্বশত্রুতার আক্রোশে রাতের অন্ধকারে চিহ্নিত দূর্বৃত্ত কর্তৃক ঘাঁস মারার বিষ প্রয়োগ করে পানের বরজ নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল ৩০ জুলাই (মঙ্গলবার) ভোররাতে উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের গয়ালমারা ৮নং ওয়ার্ডের কাট্টলী গ্রামে। এ ঘটনার পর সরেজমিন গেলে ভুক্তভোগী পান চাষী জামাল হোসাইন (৫৫) জানান, জায়গা-জমি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলে আসছিলো তার সহোদর ছোট ভাই কবির আহমেদ ও তার পরিবারের সাথে। গত ২৯ জুলাই (সোমবার) হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজের কাছে বিরোধীয় ওই জায়গা-জমি সংক্রান্ত একটি বিচারও ছিলো। ওই বিচারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সার্ভেয়ার নিয়োগ করে সঠিকভাবে যার যার জায়গা তাকে বুঝিয়ে দেওয়ার। কিন্ত জামাল হোসাইনের ছোট ভাই কবির আহমেদ ও তার পরিবার এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে না পেরে তার তিন ছেলে যথাক্রমে, মোঃ সাদেক, মোঃ সায়মন ও মোঃ সাকিব কে সাথে নিয়ে রাতের অন্ধকারে জামাল হোসাইনের চাষকৃত পানের বরজে ঘাঁস মারার বিষ প্রয়োগ করে নষ্ট করে দেয় বলে জানান তিনি। এসময় তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে আরো জানান, আমার ২০শতাংশ জমির পানের বরজে তারা শত্রুতারবসত ঘাঁস মারা কীটনাশক স্প্রে করে দেয়। এর বিষক্রিয়ায় ২টি বরজের পান পুড়ে মরে যাচ্ছে। এতে ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে পানের বরজ তৈরি করা হয়েছে। একটা সন্তানের চেয়ে পানের বরজে বেশি নজর রাখতে হয়। এই ক্ষতি পুঁষিয়ে নেওয়ার কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। অন্যদিকে, জামাল হোসাইনের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম জানান, দীর্ঘদিন যাবত জায়গা জমি নিয়ে তার দেবর কবির আহমেদের পরিবারের সাথে বিরোধ চলে আসছিলো। সেই বিরোধের জেরে কয়েকবার তাদেরকে প্রাণনাশেরও চেষ্টা চালিয়েছেন কবির আহমেদ ও তার স্ত্রী সন্তানরা। পূর্বের এসব ঘটনায় স্থানীয় চেয়ারম্যানও অবগত আছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালতেও মামলা চলমান। এরই মধ্যে আদালতকে অবমাননা করে পাহাড়ের ঢালু কেটে রাস্তা তৈরি পূর্বক অবৈধ বালির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কবির আহমেদ ও তার সন্তানরা। পাহাড়ের ঢালু কেটে রাস্তা তৈরিতে বাঁধা দেন আমার স্বামী। সেই ক্ষোভেই রাতের অন্ধকারে তারা আমার পানের বরজে ঘাঁস মারার বিষ প্রয়োগ করে নষ্ট করে দিয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে এমন জঘন্য ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার প্রার্থনা করছি। এ ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত কবির আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, পানের বরজে ঘাঁস মারার ঔষধ কারা প্রয়োগ করেছে তা আমার জানা নেই। তবে এটা সঠিক, জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের দুই ভাইয়ের মাঝে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলে আসছে এবং আদালতে মামলাও চলমান। অন্যদিকে, অভিযুক্ত কবির আহমেদের সাথে কথা বলার সময় তার ছেলে মোঃ সায়মন কর্তৃক ভুক্তভোগী পানের বরজের মালিক জামাল হোসাইনের ছেলের হাত কেটে নেওয়ারও হুমকি প্রদর্শন করেন প্রতিবেদকের সামনে। এবিষয়ে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে তারা দুই ভাইয়ের মাঝে বিরোধ চলে আসছিলো এবং সে বিরোধ মিমাংসা করতে গ্রাম আদালতে বিচারও চলমান। গতকালও তাদের সে বিষয় নিয়ে গ্রাম আদালতে বৈঠক ছিলো। কিন্তু, আজ সকালে জানতে পারি জামাল হোসাইনের পানের বরজে কীটনাশক প্রয়োগ করে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। পরে বিষয়টি আমি চকরিয়া উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দিলীপ কুমারকে অবগত করি এবং ঘটনাস্থলে গ্রাম পুলিশ পাঠাই। এ ঘটনার তদন্তপূর্বক অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে, চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস.এম নাসিম হোসেন বলেন, এবিষয়টি আপনার মাধ্যমে অবগত হয়েছি। ঘটনাস্থলে সরেজমিন গিয়ে তদন্ত করা হবে এবং ভুক্তভোগীদের আইনী সহযোগিতা করা হবে।
Leave a Reply