নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ১৯তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনকে ঘিরে রিসার্চ ফেয়ার ও একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদানসহ নানা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২৩ জুন ২০২৫) দিনব্যাপী আয়োজিত এ অনুষ্ঠানমালায় প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী, নোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ, প্রাক্তন উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, নোয়াখালী এর কমান্ড্যান্ট (ডিআইজি) মো. হায়দার আলী খান, বিপিএম, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ, নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল্লাহ্-আল-ফারুক ও নোবিপ্রবি রিসার্চ সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন গোল চত্বরে পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে রিসার্চ ফেয়ার উদ্বোধন করেন মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। উদ্বোধন শেষে তিনি অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে রিসার্চ ফেয়ারে অংশ নেয়া বিভিন্ন ইনস্টিটিউট, বিভাগ ও সংগঠনের স্টলসমূহ পরিদর্শন করেন। এরপর বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ রুহুল আমিন অডিটোরিয়ামে একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে ৭০ জন শিক্ষককে ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড ও রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড এবং ৩১ জন শিক্ষার্থীকে ডিনস্ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ও সেবা এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন,বিশ্ববিদ্যালয় ১৯ থেকে ২০ বছরে পা দিয়েছে। বয়সে যেহেতু তরুণ প্রতিষ্ঠান তাই ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসন ও যাতায়াতসহ নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। শিক্ষকদেরও গবেষণা বরাদ্দ ও ল্যাব সুবিধাসহ নানা বিষয় নিয়ে অভাব-অভিযোগ থাকতে পারে। কোনোটাই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ বিষয়গুলো বিবেচনার চেষ্টা করছি। বিগত সময়ে ভেবেছিলাম আমার জীবদ্দশায় হয়তো প্রজা হয়েই মৃত্যুবরণ করতে হবে। কিন্তু তরুণ সমাজ জেগে উঠে ফ্যাসিবাদের প্রতিরোধ এবং উৎখাত করলো। কোনো জাতি বৈষম্য দূর করতে চাইলে তার সবচেয়ে বড় বাহন হলো শিক্ষা। অন্ধ বিশ্বাসের চর্চা না করে বিজ্ঞানের চর্চা করতে হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, রিসার্চ ফেয়ার এবং একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ যা শিক্ষকদের গবেষণামুখী করবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ামুখী করবে। এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। আমাদের যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন এডুকেশন মডেল নিয়ে ভাবতে হবে। এখন ওবিই এসেছে, স্কিল বেউজড এডুকেশন এসেছে। এসব বিষয় আমলে নিয়ে আমাদের মোড অব একটিভিটিজ ও টিচিং মেথড আপগ্রেড করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর কয়েক মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নয়নে কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। এরমধ্যে অন্যতম হলো, বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং সেল গঠন, পিএইচডি ফেলোশিপ প্রদান ও ছুটি বৃদ্ধিকরণ, প্রকাশনা ও গবেষণায় প্রণোদনা বৃদ্ধি, ডিনস্ অ্যাওয়ার্ড ও ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড প্রবর্তন, অ্যানিম্যাল হাউজ প্রতিষ্ঠা, বিদেশি খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কোলাবোরেশন, মার্ক টেম্পারিং রোধে ডাবল ব্লাইন্ড কোডিং পদ্ধতি চালু, আবাসিক হল, বিভাগ ও অফিসসমুহে ফার্স্ট এইড বক্স প্রদান ও অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ, নতুন অ্যাম্বুলেন্স ও বাস সংযোজন, যুগোপযোগী ও পরিপূর্ণ তথ্য সংবলিত ওয়েবসাইট চালু, প্রশাসনে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এসিআর পদ্ধতি ও শিক্ষকদের ইভ্যালুয়েশন পদ্ধতি চালুকরণ, অ্যালামনাই অফিস প্রতিষ্ঠা। আশা করছি, আগামী দিনে আমরা নোবিপ্রবিকে দেশের জন্য একটি অগ্রগামী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো। এসময় তিনি নোবিপ্রবিতে সেন্টার অব এক্সিলেন্স প্রতিষ্ঠা, শিক্ষার্থীদের জন্য হল নির্মাণ ও টিএসসি প্রতিষ্ঠায় মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ ও সহযোগিতা কামনা করেন।
বিকালের অধিবেশনে বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ রুহুল আমিন অডিটোরিয়ামে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণা উপস্থাপনা ও সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ, ইনস্টিটিউটের পরিচালকবৃন্দ, বিভাগের চেয়ারম্যানবৃন্দ ও দফতর প্রধানবৃন্দ বিভিন্ন বিভাগ ও দফতরের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply