প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্ক ক্রমেই অবনতি হচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে তিক্ততার। সার্কের প্রতিষ্ঠর সময় সদস্য দেশ ছিলো ৭টি। সেখানে উদ্দেশ্য ছিলো এই ৭টি দেশের সাথে সমন্বয় করে একটি কার্যকর ভূমিকা পালন করা। আদৌ কি তাই হয়েছে? আপাতদৃষ্টিতে হয়নি। কেনো হয়নি? সেটা বলা মুশকিল। কিন্তু ভারতের অতি আগ্রাসনের কারণেই হয়নি। দেখা যাক কেনো বা কিভাবে হয়নি।
প্রথমেই ধরা যাক পাকিস্তানের কথা। ভারতের সাথে পাকিস্তানের সেই ৪৭ এর পর থেকেই কাশ্মীর নিয়ে ঝামেলা আছে। এবং পরবর্তীতে কিছুটা ভালো হলেও মুম্বাই হামলার পর চরম পর্যায়ে চলে যায়। এরপর থেকে কাশ্মীর নিয়ে প্রায়ই চলতে থাকে। সুতরাং বলা চলে পাকিস্তানের সাথে ভারতের সম্পর্ক ভালো হওয়া অনেকটা অসম্ভব।
এরপর নেপালের সাথে। সাম্প্রতিক সময়ে নেপালও তাদের ৩টি সিমান্ত নিয়ে ভারতের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। ভারতের নিয়ন্ত্রনাধীন ৩টি স্থান তাদের মানচিত্রে স্থান দিয়ে প্রকাশ করেছে। ছোট এই দেশটি রীতিমতো ভারতের চরম মাথা ব্যাথা হয়ে দাড়িয়েছে। এখানেও ভারত সুসম্পর্ক গড়তে ব্যার্থ।
এরপরে আসা যাক দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার দিকে। তামিলদের জন্য ভারতের সাথে শ্রীলঙ্কার সম্পর্ক অনেক আগে থেকেই খারাপ। এর প্রমাণ আমরা পাই চেন্নাইয়ে কোনো শ্রীলঙ্কান খেলোয়াড় খেলতে পারে না। সুতরাং বলা চলে তামিলনাড়ু নিয়ে ঝামেলা শ্রীলঙ্কার সাথে ভারতের সম্পর্ক খুবই খারাপ। কিন্তু তাতে আরো ছাই ঢেলেছে চীন। চীনের ঋণের বোঝা এখন শ্রীলঙ্কার ঘাড়ে। সুতরাং চীন যা বলবে তা অবশ্যই শ্রীলঙ্কার শুনতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের সাথে শ্রীলঙ্কার সম্পর্ক ভালো হওয়া আপাতত সম্ভব না।
মালদ্বীপ নিয়েও ভারতের ভালোই মাথা ব্যাথা রয়েছে। কেননা শ্রীলঙ্কার মতো তারাও চীনের ঋণের বোঝা টানতে হচ্ছে। সেখানেও রয়েছে চীনের আধিপত্য। চীনকে রেখে ভারতের সাথে সম্পর্ক করা মালদ্বীপের অনেকটা অসম্ভব।
ভুটানের সাথে আপাতত ভারতের মোটামুটি ভালো সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু ভারতের বর্তমান আগ্রাসনে কতদিন থাকবে তা নিয়ে আপাতত সন্দেহ আছে। কারণ চীন একটু ফাক পেলেই যে ভুটানে ঢুকে পড়বে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এবার আসি ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ বাংলাদেশের কথায়। বাংলাদেশ অনেকটা ভারতের হার্ট ও বলা যেতে পারে। কারণ এদেশে যারা একবার ঘাটি গাড়তে পারবে তারাই ভারতকে শেষ করে দিবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের সাথে ভারতের ভালো সম্পর্ক সেই জন্মলগ্ন থেকেই। কিন্তু সেই সম্পর্ক যে আগের মতো নেই সেটা বর্তমান পরিস্থিতি দেখলেই বোঝা যায়। ভারতের বর্তমান নাগরিকত্ব আইন যেটা বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক খারাপের একটা কারণ। আরো অনেক কারণ রয়েছে। যেটা আপাতত বলতে চাচ্ছি না। বর্তমান মোদী সরকার বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ভালো করতে ব্যার্থ। তাই বলা চলে এখানেও বর্তমানে ভারতের সাথে শীতল সম্পর্ক রয়েছে। এর কারণ হিসেবে দেখা যায় বর্তমান চীনের অবস্থান। চীন বাংলাদেশকে ৯৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে রাজি হয়েছে। এবং বিপুল পরিমাণ ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। এবং বাংলাদেশ সেটা লুফেও নিয়েছে। চীন ঢাকা উত্তর সিটিকে তাদের সিস্টার সিটি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। বর্তমানে ভারতের চেয়ে চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো রয়েছে। যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বলে “কারো সাথে বৈরিতা নয়, সবার সাথে বন্ধুত্ব গড়তে হবে।” এখানে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে।
এই পরিস্থিতি দেখলে বোঝা যায় ভারত অনেকটা একঘরে হয়ে রয়েছে। যেটা আসলে ভারতের জন্য খুবই দুঃসংবাদ। কারণ প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে যদি সম্পর্ক ভালো না থাকে তাহলে দেশ চলা খুবই কঠিন।
ভারতের সাথে তাদের প্রতিবেশী প্রতিটা দেশেরই ঝামেলা রয়েছে। চীনের সাথে ঝামেলা। আর চীনের সাথে ঝামেলা মানে মায়ানমারের সাথে ঝামেলা। কারণ মায়ানমার ও চীনের দেওয়া ঋণের বোঝা বইছে। চীন যা বলবে তা শুনতে হবে। ভারতের জন্য খুবই ভয়ানক খবর। মোদীর পররাষ্ট্রনীতি এতটা বাজে হবে তা কল্পনাও করা যায় না। তারা প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক ভালো না রেখে ব্রাজিলের সাথে সম্পর্ক ভালো করতে ব্যাস্ত। এসবের ফল অবশ্যই ভারতকে বহন করতে হবে। ভারত সরকারকে এখন নমনীয় হয়ে সবার সাথে ভালো সম্পর্ক করতে হবে। অন্যথায় চরম অবস্থার সৃষ্টি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
লেখকঃ সজল আহমেদ, শিক্ষার্থী,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,গোপালগঞ্জ।
Leave a Reply