পথশিশুদের জীবন আজ অনিশ্চিত! হতাশা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কেটে যায় এসব পথকলিদের!
আজকের শিশু আগামি দিনের ভবিষ্যত। তাই তাদের সঠিকভাবে পরিচর্যা করাটাও অত্যন্ত জরুরী। শিশু আর পথশিশু দুটি শব্দ আলাদা মনে হলেও শিশু আর পথশিশু কিন্তু একই। শিশু আর পথশিশুর মধ্য কোন ভেদাভেদ আছে বলে আমি মনে করি না। রাস্তায় জীবনযাপন করার কারণে তারা পরিচিত হয় পথশিশু হিসেবে ।আসলে মানুষের মানবতা এবং মনুষ্যত্ব দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে যার কারনে আমাদের দেশে পথশিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আসলে এর মূলে রয়েছে অজ্ঞতা, দারিদ্রতা, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব। একশ্রেণির অশিক্ষিত ও দরিদ্র মানুষ অপরিকল্পিতভাবে সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকে এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পর তাদেরকে পরিত্যাগ করে। এভাবেই বাড়তে থাকে অবহেলিত পথশিশুর সংখ্যা। এসব পিতামাতা সন্তানদের মারধর করে রোজগার করার জন্য। তখন থেকেই শুরু হয় তাদের অবহেলিত কষ্টের জীবন। পথশিশুদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এই কচি, কোমল মুখগুলো পরিচিত হয় নতুন অনেক অসহনীয় অভিজ্ঞতার সঙ্গে। পথশিশুদের মধ্যে কঠিন বাস্তবতা এমন ভাবে জায়গা করে নেয় একসময় ওরাই হয়ে ওঠে নেশাখোর,ছিনতাইকা,ইত্যাদি। আজ যে ছোট ছোট বাচ্চা রাস্তায় পত্রিকা বিক্রি করে, ফুল বিক্রি করে কিংবা কিছু খাবে বলে টাকা চায় তাদের ভবিষ্যত কী হবে? যে বয়সে তাদের হাতে থাকা উচিৎ বই-খাতা সে বয়সে তাদের হাতে থাকে প্লাস্টিকের বস্তা। রাস্তায় রাস্তায় তারা প্লাস্টিক খুঁজে। কি নির্মম বেদনাময় দৃশ্য!
২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা ছিলো ১০ লাখ, যার মধ্যে আড়াই লাখের বেশিই ছিলো রাজধানীতে। বর্তমানে বাংলাদেশে পথ শিশুর সংখ্যা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। কেউ বলেন ২১ লাখ। আবার কেউ বলেন ২৪ লাখ। তবে এদের মধ্যে ৫০ হাজার শিশু আক্ষরিক অর্থেই রাস্তায় থাকে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পথশিশুদের ৫১ ভাগ ‘অশ্লীল কথার শিকার’ হয়। শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয় ২০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয় মেয়েশিশু। ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ পথশিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। আর মেয়ে পথশিশুদের মধ্যে ৪৬ ভাগ যৌন নির্যাতনের শিকার।
পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করছে লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (লিডো) নামের একটি এনজিও। সংস্থাটির তথ্যমতে, পথশিশুদের কেউ কেউ মাদকাসক্ত হয়ে রাস্তায়ই মারা যায়। কেউ কেউ বিভিন্ন চক্রের মাধ্যমে পাচার হয়ে যায়। যারা পাচারের শিকার হয়, তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি হয়। নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয় তারা। যারা মেয়ে, তারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। কোনো কোনো গ্যাং তাদের যৌনকর্মী হতে বাধ্য করে। এছাড়াও, অপরাধীচক্রগুলো এদের মাদকসহ নানা অবৈধ ব্যবসায় কাজে লাগায়। এরা আসলে অপরাধী নয়। এরা অপরাধের শিকার হয়। রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের নানা কাজে ব্যবহার করে।
পথশিশুদের সবচেয়ে বেশি প্রোয়োজন খাদ্য এবং বাসস্থা। তার পর তাদের তাদের প্রয়োজন ভালো গাইড লাইন। এসব শিশুরা যদি গাইড লাইনের ভিতর দিয়ে না যায় তাহলে তাদের ভবিষ্যত নিশ্চিত অন্ধকার।এখন দেখাযায় পরিবারের সাথে থেকেও ছেলে-মেয়েরা বিপথে চলে যায়। সেখানে রাস্তায় থাকা এসব ছেলে-মেয়েদের বিপথে নিয়ে যাওয়া কোনো ব্যপার বলে আমার মনে হয় না। তাই তাদের সরকারের সহয়তায় হোক আর বেসরকারি সহয়তায় হোক থাকা-খাওয়া এবং পড়াশুনার মাধ্যমে অন্যান্য বাচ্চাদের মতো জীবন-যাপন করার সুযোগ করে দিতে হবে। তবেই পথশিশু নামক কোনো নাম শিশুর সাথে যুক্ত হবে না।দেশ থেকে মুছে যাবে টোকাই নামক শব্দটি। শিশু থাকবে শিশুর মতোই।
লেখকঃ মোঃ রাইয়ান জিহাদ,শিক্ষার্থী,মোল্লাকান্দি লালমিয়া পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজ, কুমিল্লা।
Leave a Reply