নির্বিচার দন্ড, হয়রানি এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড
সম্প্রতি পুলিশের দ্বারা সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকতা মেজর সিনহা রাশেদ হত্যার ঘটনায় কোর্স ফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের ঘটনাটি সামনে আসে।
কিন্তু শুধু পুুুলিশই নয়, জাতীয় অন্যান্য বাহিনী গুলোর দ্বারা এই ধরনের ক্রসফায়ারে জড়িত হবার ঘটনা দেখা যায়।বিচারহীন দন্ডে প্রাননাশ ও হয়রানির শিকার হন ভিক্টিমের স্বজনরা। সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে চলেছে।
সূচনার দিকে যদি যাওয়া যায় বিচারবহির্ভূত এই ধরনের হত্যাকান্ডের সূচনা বি.এন.পি. সরকারের আমলে ঘটে।
২০০২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ১১৫৫ জন ব্যক্তি হত্যা কান্ডের শিকার হয়।
ভুলে গেলে চলবে না বি.এন.পি. নেতৃত্বতাধীন তৎকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছিল, “বাংলাদেশের বিশেষ বাহিনী র্যাবের হাতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের তদন্তের দাবি সরকারগুলো এড়িয়ে যাচ্ছে।”
পরবর্তী বর্তমান সময়েও এই রকম ঘটনা সকলের সামনে আসে যখন যখন প্রশাসনের পুলিশ বাহিনীর কর্তৃক ২০১৭ সালের শেষ দিকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ১৭ লাখ টাকা নেবার পর ডিবি পুলিশের সাত সদস্য সেনাবাহিনীর কাছে আটক হয়।
যথাযথ বিচারের অভাবে এই ধরনের কুখ্যাত ঘটনা গুলো ঘটে চলেছে কিছুটা বেশিমাত্রায়। যেখানে কক্সবাজারে ব্যাপক আকারে দেখা দেয় এই সঙ্কট।
২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মাদক বিরোধী অভিযানে নিহত চার শতাধিক লোকের একজন ছিলেন টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা একরামুল হক।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়ে পড়েছিল ঘটনাটি অডিও ক্লিপ টিতে একরামুল হককে তার মেয়ের সাথে কান্নাজড়িত কন্ঠে কথা বলতে শোনা যায় এবং হঠাৎ গুলির শব্দ ভেসে আসে। তার স্ত্রী তখন জানান তিনি জানেন না কেন তার স্বামীকে নিয়ে গিয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজানো হয়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের যে ঘটনাগুলো ঘটে কখনও তার তদন্ত হয় কিনা, তা জানা যায় না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আত্নরক্ষার্থে গুলি করার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তার অপপ্রয়োগ যাতে কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের কর্তৃক না হয়, এ দাবীও সকলের।
৩১ জুলাই সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃষ্টি করে সাবেক মেজর সিনহার হত্যাকান্ডের ঘটনাটি।
যেটি রীতিমত তাক লাগিয়ে দেয় পুরো দেশকে। যেখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরই সাবেক এক সদস্যকে কথিক বন্দুকযুদ্ধে মৃত দেখানো হয়।তার ‘জাস্ট গো’ শিরোনামে ডকুমেন্টারির সঙ্গী সিফাত, শিপ্রাকে আটক দেখায় পুলিশ।আদালত থেকে সিফাত ও শিপ্রাকে জামিন দেয়ার পর বিষয়টির তদন্তের দায়িত্ব র্যাবের হাতে দেয়া হয়।
আাসামী প্রদীপসহ কয়েকজন পুলিশসদস্যকেও আটক দেখানো হয়।
বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনা সৃষ্টি হলে কক্সবাজারে সেনা ও পুলিশ দুই শীর্ষ কর্মকর্তা প্রেসব্রিফিং করেন।
পুলিশের তরফ থেকেও বলা হয়েছে এধরনের ঘটনার পরবর্তীতে আর ঘটবে না। জনগণ অবশ্যই তা চান।
মানবাধিকার কর্মীরাও বলেছেন এ ধরনের ঘটনা ঘটনা গুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি কে ক্ষুণ্ন করে।
এই ধরনের বিচার বহির্ভূত ঘটনার জন্যে হয়রানির শিকার ছাত্র সাংবাদিক, ব্যবসায়িকগণ শিক্ষকসহ সকল পেশার মানুষ।
ঘটনাগুলো নির্বিচার দন্ডে পরিণত করে ভিক্টিমসহ ভিক্টিমের পুরো পরিবারকে।
মেজর সিনহা হত্যাকান্ড সহ হয়রানির শিকার সকল নির্বীচার বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের উপযুক্ত বিচারের মাধ্যমে এর উপযুক্ত নির্লোপ ঘটানা সম্ভব হতে পারে।
লেখকঃ সিফাত সাব্বীর,
শিক্ষার্থী,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
Leave a Reply