করোনাকালীন পরিবেশ ও শিশু-কিশোর
এইতো কিছুদিন আগের কথা,
শিশুরা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে।একজন অন্যজনের সাথে গল্পের সমাহার নিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়েই দৌড়াদৌড়ি করা,ফুটবল, ক্রিকেট ছোঁয়াছুঁয়ি, গোল্লাছুট, হাডুডু ইত্যাদি খেলায় মেতে উঠতো।আর সাথে পড়াশোনা।আবার টিফিন টাইমে সেই একই কাজ।ছুটি হবে, রাস্তায় হবে কিছু কমেডি,গল্প হবে বাড়ি পর্যন্ত। তারপর আবার বাড়ির মাঠে নেমে পরা!!কিন্তু সেগুলো কোথায় যেন হুট করে হারিয়ে গেলো।।
হুট করে এক ঝড় এসে সব কিছু সুনসান করে গেলো।।এখন আর শিশুদের ভোরে বিদ্যালয়ে যেতে দেখা যায় না।রাস্তায় তাদের দুষ্টামিরও দেখা মেলে না। বিদ্যালয়ে কোনো হৈহুল্লো নেই,না আছে খেলার মাঠে শিশুদের আগমন।
বিকেলে শিশুদের খেলার মাঠ থাকে স্তব্ধ।
কোনো আওয়াজ নেই।
সবাই যেন অসুখের অসহ্য যন্ত্রণার ভয়ে কাতর।
সব কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।
রাস্তায় বেড়োলে শিশুদের দেখা মেলে না।এদিকে ওদিকে তাকালে বাড়ির বেলকুনিতে যতটুকু দেখা মেলে তাও যেন আবছায়ার মত।নেই কোনো হাসি-কান্নার কোলাহল।কেমন যেন মনে হয় গাছে আর ফুল ফুটছে না,বর্ষার শাপলা-পদ্মর দেখা মিলছে না, পাতা গুলো নুয়ে পরছে।
ছোটবেলায় একটা বই পড়েছিলাম, “হেমিলনে বাশিঁওয়ালা”,বাশিঁওয়ালা যখন ইঁদুর তাড়ানোর জন্য তার পাওনা মুদ্রা না পাওয়ায় ৪ বছরের বেশি শিশু গুলোকে নিয়ে গেলো, তখন শিশুদের হাসি কান্না কোলাহল ব্যতীত পাতা গুলো সব নুয়ে পরছিলো,ফুল মরে যাচ্ছিলো,সূর্যের আলোতেও চারিদিক অন্ধকার মনে হচ্ছিলো।
বর্তমানে মহামারী “করোনা”-র কারনে সৃষ্টি হয়েছে সেই একই পরিস্থিতি।চীনে থেকে শুরু হওয়া এই মহামারী এখন সারাবিশ্বের কাল হয়ে ছেড়েছে। এই পর্যন্ত সারাবিশ্বের ৭ লক্ষের বেশী মানুষ মারা গিয়েছে। আক্রেন্তের পরিমাণ অগণিত!!!যার ফলে বাংলাদেশে গত ১৭-মার্চ থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ,৪ থেকে সকল বয়সের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। মাঠে ঘাটে রাস্তায় খেলে-বেড়ানো মানুষগুলোকে এখন ঘরকুনো হতে হয়েছে। যার ফলে তাদের মানসিক অবস্থা অনেকটা বিপত্তির পথে।।
পরিবেশ মানুষকে প্রভাবিত করে।একজন মানুষ তার নিত্যদিনের অভ্যাসের সাথে বেড়ে ওঠে। আর এই অভ্যাসের তারতম্য ঘটলে তার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে,অস্বস্থি বোধ হয়,মনে হয় সব যেন শেষ হয়ে গেলো।এদিকে শিশুরা বেড়ে ওঠে বিভিন্ন খেলাধুলা করে।খেলাধুলা তাদের জন্য ব্যায়ামের মত কাজ করে।হঠাৎ করে এগুলো থেমে যাওয়ায় ঘরে বসে থাকতে থাকতে অনেক শিশুই মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরছে।।
অন্যদিকে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতিরা বিষন্নতায় ভুগছে।স্বপ্ন হচ্ছে চুরমার সাথে, মানসিক যন্ত্রণা।
এছাড়া “অনলাইন ক্লাস” শিক্ষার্থীদের জীবনে হয়ে উঠেছে অনেক বড় দুর্যোগ।করোনার কারনে এখন শিক্ষার্থীরা যার যার বাড়িতে অবস্থান করছেন।অনেকের বাড়ি গ্রামে হওয়ার কারনে তারা নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না।অনেকের হয়তো স্মার্ট ফোন নেই।আবার অনেকের ফ্যামিলি আর্থিক সমস্যার কারনে দু’বেলা খেতেই পারছে কিনা সন্দেহ। সেখানে অনলাইন ক্লাস তো ‘সোনার হরিণ’।অনলাইন ক্লাস উপস্থিত হতে না পেরে তারা অনেক কিছু থেকে পিছিয়ে পরছে এবং তা নিয়ে হয়ে উঠছে বিষন্ন!!
‘করোনা’ আবার হয়ে উঠেছে বিবাহ মৌসুম। এতো বড় মহামারীর ভয়ে কিছু মানুষ যখন ঘরে আটকে আছে , তখন অন্যদিকে এই সময়টা হয়ে উঠেছে বিবাহের সময়।। অনেকে পারিবারিক চাপে পরে এই মৌসুমে যোগ দিচ্ছে বিয়েতে। যার ফলে কখনো স্বপ্ন হারানোর ভয় আবার কখনো প্রিয়জন হারানোর ভয়ে মানসিক ভাবে হয়ে উঠেছে অসুস্থ।কেউ কেউ আবার পরিবারের সাথে মানিয়ে উঠতে পারছে না।যার কারনে নিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্ত, যা খুবই ভয়াবহ।।
এইতো কিছুদিন আগের কথা,”দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে পারিবারিক কলহের জেরে মায়ের উপর অভিমান করে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৬ বছর বয়সী শিরিন আক্তার নামে এক কিশোরী।”
এসব কিছুর সমাধান হচ্ছে করোনা থেকে মুক্তি।আর এর থেকে মুক্তি পেতে একমাত্র সৃষ্টিকর্তার
উপর ভরসা করা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।তাই আমাদের উচিৎ তার কাছে প্রার্থনা করা এবং নিজেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে চেষ্টা করা।।
লেখকঃ মৌ আফরিন (মিম),
অনার্স ২য় বর্ষ,
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ,
নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজ, রাজশাহী
অনেক তথ্যবহুল এবং সময় উপযোগী লিখাটা, ভালো লাগলো অনেক।