শিক্ষার্থীরাই আজ ও আগামির বাংলাদেশ এবং দেশের কর্ণধার। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা এবং কর্মদক্ষতা যেমন দেশের জন্য অগ্রগতি বয়ে আনে তেমনি তাদের ভুল পথে পা বাড়ানো সমগ্র জাতির এগিয়ে চলায় সৃষ্টি করে শঙ্কা। বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন ভুল ও ব্যর্থতায় জর্জরিত যা মাত্রাতিরিক্ত হলে অনেক শিক্ষার্থী নিজের জীবন জলাঞ্জলি দিতেও দ্বিধা করেন না। কিন্তু জাতির মেধাবি সন্তানরা কেন এতোটা নির্দয় হয়ে নির্দিধায় নিজেকে মৃত্যুর কাছে সপে দেন? এর কারণ অনেক তন্মেধ্যে প্রধান কারণ হলো বিষণ্ণতা যা একটি ভয়াবহ মানসিক ব্যাধি।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯–এ দেখা যায়, বাংলাদেশে ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৪ শতাংশ কিশোর–কিশোরীর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আছে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকা এসব কিশোর-কিশোরীর ৯৫ শতাংশ কোনো চিকিৎসা নেয় না। জরিপে আরো দেখা যায়, দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সী মানুষের ১৭ শতাংশ কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত। এসব ব্যক্তির ৯২ শতাংশ চিকিৎসা নেয় না। বস্তুত বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের এমন নাজেহাল অবস্থার অন্যতম কারণ মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় চিকিৎসার অপ্রতুলতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে মোট জনসংখ্যার বিপরীতে মাত্র ২৫০ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও ৬০ জন ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানী রয়েছেন। এছাড়া শিশু মনোবিজ্ঞানী একেবারে নেই বললেই চলে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক রয়েছেন ১০ হাজার জন এবং নার্স ১২ হাজার জন। এমন চিকিৎসা-সক্ষমতা দিয়েই এ বিরাট সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
এমন করুণ পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগের গুরুত্বও অপরিসীম। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকে ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে যাত্রা শুরু করেছে আঁচল ফাউন্ডেশন যেখানে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কাজ করছে একঝাক মেধাবি শিক্ষার্থী। ফাউন্ডেশনে বর্তমানে ২৫ সদস্যের কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী তানসেন রোজ। এছাড়াও জেনারেল সেক্রেটারি রাফিয়া তাসনিম রিফা, মিনিস্টার অব অপারেশন সামিরা ইসলাম সহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে শিক্ষার্থীদের মানসিক সু স্বাস্থ্যের জন্য সর্বোচ্চ আন্তরিক ও যত্নশীল।
আঁচল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে নিয়মিত সভা, সেমিনার এবং অনলাইনে সচেতনতামূলক অনেক কর্মশালার আয়োজন করা হয় হচ্ছে। হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের হতাশার চাদর থেকে বের করতে এখানে রয়েছে সুদক্ষ সাইকোলজিস্ট যাদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং করা হয়। প্রেসিডেন্ট তানসেন রোজ বলেন, আঁচল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দেশব্যাপী সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে যাতে প্রত্যেকে শারীরিক স্বাস্থ্যের সাথে মানসিকভাবেও সুস্থ্য থাকতে পারেন। আর শিক্ষার্থীরা যদি সচেতন হয় তাহলে সচেতন হবে পরিবার, সমাজ এবং গোটা দেশ এমনটাই বিশ্বাস করেন তানসেন রোজ।
Leave a Reply