এতগুলো প্রাণের দায় কে নিবে?
নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেক মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের মত। অনেকের অবস্থা আশংকাজনক। এই যে এতগুলো মানুষের প্রাণ গেলো এই দায় কে নিবে?
ঘটনার পর থেকে আমরা যা জানতে পারছি তাহলো, মসজিদে এসি বিস্ফোরণের কারণে সেখানে আগুন লাগে। পরে জানা গেলে সেখানে গ্যাসের লাইন লিকেজের কারণে গ্যাস বের হতো সেখান থেকেই এই অগ্নিকাণ্ডের সুত্রপাত।
ঘটনার দিকে আর একটু নজর দিলে বুঝতে পারা যায় যে, মসজিদটির বর্ধিত অংশ রাস্তার উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর কিছু অংশের নির্মাণ হয়েছে তিতাস গ্যাসের সঞ্চালন লাইনের উপর দিয়ে। এসব বিষয়ে কাউকেই কোন কথা বলতে দেখলাম না। সবাই শুধু সরকারের উপর দোষ চাপিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন। আপনি যখন কোন একটা স্থাপনা তৈরি করবেন তখন অবশ্যই আপনাকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। সেটা নিজের বাড়ি হোক বা কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ-মন্দির হোক।
নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের আসল কারণ নিয়ে কেউই কোন কথা বলছেন না।
বিষয়টা খুহই স্পর্শকাতর বলেই হয়তো এই বিষয়ে সবাই চুপ!
সবাই তিতাস গ্যাসকে ধুয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন গ্যাসের লাইন লিকেজ ছিল এটা তিতাসকে জানানোর পরেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কোন মসজিদে তো গ্যাসের লাইনের দরকার হয়না। প্রথমেই তাই বিষয়টাতে খটকা লেগেছে। কাহিনীটা কি বোঝার চেষ্টা করেছি প্রথমে। এখানে দুটি বিষয় রয়েছে, প্রথমত মসজিদ কমিটি কেন এমন দায়িত্ব জ্ঞানহীন আচরণ করলো? বর্ধিত অংশ রাস্তার উপর কেন নির্মাণ করতে গেলো? দ্বিতীয়ত, তিতাসের সঞ্চালন লাইনের উপর দিয়ে যখন মসজিদটির বর্ধিত অংশ নির্মাণ হয়েছিল তখন কি মসজিদ কমিটি তিতাস গ্যাসকে জানিয়েছিল যে, তাদের মসজিদের নিচ দিয়ে গ্যাসের লাইন রয়েছে। সেই সাথে আরো একটি প্রশ্ন এসে যাচ্ছে যে, আপনি নিয়ম-নীতি না মেনে রাস্তার উপর মসজিদের বর্ধিত অংশ তুলে দিলেন যেখানে গ্যাসের লাইন রয়েছে চাইলেই কি সেই লাইন তুলে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা সম্ভব?
আর একটি কথা এখন মসজিদ কমিটি বলার চেষ্টা করছে সেটা হলো গ্যাসের লিকেজের কথা তিতাসকে জানানোর পরেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, এমন অভিযোগ মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে তিতাসকে জানানো হয়নি। কারণ ওই মসজিদটি তিতাসের লাইনের উপর অবৈধভাবে সম্প্রসারিত হয়েছিল। ঘটনা যদি সত্যিও হয় যে, তিতাস ঘুষ চেয়েছিল তার পরেও কেন মসজিদ কমিটি এতগুলো মানুষের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে নামাজ পড়ার অনুমতি দিয়ে গেছেন যেখানে গ্যাসের লিকেজ থেকে গ্যাস বের হয়ে মসজিদের ভেতর বুদবুদের সৃষ্টি হয়েছিল। আপনি যখন দেখবেন এমন বিদপজনক অবস্থায় গ্যাস লিকেজ হচ্ছে তবুও কেন সেখানে মসজিদটি সাময়িকভাবে বন্ধ না করে নামাজ চালিয়ে গেলেন।
সম্পূর্ণ মসজিদটি এয়ারকন্ডিশন করার কারণে ভেতরটা বদ্ধ অবস্থায় থাকতো। দরজা-জানালো কাচ দিয়ে ঘেরা থাকতো। এই অবস্থায় গ্যাসের লিকেজ থেকে ভেতর গ্যাস বের হয়ে আসলে টোটাল মসজিদটিই একটা গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়।
কোন দায়িত্বশীল মানুষ বা মসজিদ কমিটি একবারও মনে করলো না এখান থেকে কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে?
মসজিদ কমিটি সম্পূর্ণ কাজটিই করেছে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতির সুযোগ নিয়ে। এভাবে আপনি নিয়ম-নীতি না মেনে গ্যাসের লাইনের উপর মসজিদ বানাবেন আবার দুর্ঘটনা ঘটলে তিতাসকেই দায়ী করবেন! এটা তো হতে পারেনা?
বিষয়টা খুবই দু:খজনক। দুর্ঘটনার ফ্যাক্টচুয়াল কারণ নিয়ে কথা বলুন। যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা না ঘটে। কারণ সারা দেশেই এরকমভাবে নিয়ম-নীতি না মেনে অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
খবরে পড়লাম যে, বিদ্যুতের যে লাইনটি ছিল ওই মসজিদে সেই লোড দিয়ে এতগুলো এসি চালানোর মত সক্ষমতার লাইন সেটি ছিলনা। তার উপর নিম্নমানের তার ও সার্কিট ব্যবহারের কারণে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনাকে ত্বরান্বিত করেছে। ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যাই নির্মাণ করুন না কেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিয়ম-কানুন মেনে স্থাপনা নির্মাণ করুণ।
নায়ারণগঞ্জের মসজিদে দুর্ঘটনার পর থেকেই বার বার একটি কথাই মনে হচ্ছে এতগুলো প্রাণের দায় কে নিবে?
লেখকঃ সরদার মাহমুদ হাসান রুবেল, সাবেক ছাত্রনেতা ও আহ্বায়ক,বঙ্গবন্ধু পরিষদ,ঢাকা মহানগর।
Leave a Reply