ঋতু পরিবর্তনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে রোগির সংখ্যা বেড়েছে।জানা গেছে, রাজশাহীতে সন্ধ্যার পরেই শুরু হচ্ছে ঠান্ডা আবহাওয়া। রাত বেড়ে ভোরে বেড়েছে শীত। সকালে হয়ে বেলা গড়ালেই রোদের প্রকোপে মাঝে মাঝে শরীর ঘেমে যাচ্ছে। তাপমাত্রার এই পরিবর্তনে হওয়ায় ছোট-বড় সবাই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগির সংখ্যা।
করোনাকালে এ সময়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ চিকিৎসকদের। আর ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে রোগির ভিড় বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। বয়স্করা ভুগছেনশ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য রোগে। হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে এখন রোগিতে গাদাগাদি অবস্থা! এদিকে কয়েকদিন ধরে আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে শিশুরা খুব সহজেই ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়ার প্রবণতা বেড়েছে আগের তুলনায়।
একমাসে হাসপাতালগুলোতে রোগি ভর্তির হার বেড়েছে কয়েকগুণ। একদিকে করোনা, অন্যদিকে ঋতু পরিবর্তন। শিশু ও বয়স্করা নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি গত কয়েকদিনে বেড়েছে করোনার হারও। সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রৎকিওলাইটিস, ডায়রিয়া, টায়ফয়েট, কলেরা, জ্বর সহ নানা রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে আসছেন অভিভাবকরা।
রামেক হাসপাতালের ৩টি শিশু ইউনিটের মাঝে ২৪ নম্বর ইউনিট, ১০ নম্বর ইউনিট এবং ২৬ নম্বর ইউনিট মিলে বেড সংখ্য রয়েছে ১২০টি। প্রস্তুত রয়েছে বিশেষুিয়ত নবজাত ওয়ার্ড যা বিদ্যুৎ সরবরাহের অপেক্ষায় রয়েছে। হাসপাতালে রোগির সংখ্যা অনেক বেশি। বেড কম থাকায় হাসপাতালের মেঝেসহ বাইরের বারান্দায়Ñ সব মিলে প্রায় ৩৫০টি শিশু ভর্তি রয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, ‘অতীতের চেয়ে বর্তমানে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ টি নতুন শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এই সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেয়েছে গত তিন সপ্তাহ থেকে।
শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিশু বিভাগের বেডসহ মেঝে আর বারান্দায় হাটা-চলার জায়গাটুকুও নেই । হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ শিশুর চিকিৎসা সেবা নিয়ে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের তথ্যমতে, এই সময় অভিভাবকদের একটু অসচেতনতায় শিশুদের অসুস্থতার পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করে।
মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) সকালে হাসপাতালের ২৪ নম্বর ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, গোটা ইউনিটের শুরু প্রান্ত থেকে শেষ প্রান্ত কোথাও কিঞ্চিত পরিমাণে জায়গা নেই। শিশুসহ অভিভাবকরা বেড না পেয়ে মেঝেতে এবং বারান্দায় জায়গা করে নিয়েছেন। চিকিৎসকরা জানান, ‘এখন আবহাওয়া পরিবর্তন হয়েছে। শীত চলে বাড়ছে। অভিভাবকরা একটু অসচেতন হলেই বাচ্চাদের সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রৎকিওলাইটিস, ডায়রিয়া, টায়ফয়েট, কলেরা, জ্বর সহ নানান রোগে আক্রান্ত হবে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. বেলাল উদ্দিন জানান, ‘শীতের আগেই শিশুর অভিভাবকদের সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে। এ সময় অভিভাবকদের বলা হয় শিশুর প্রাথমিক ডাক্তার। চিকিৎসার প্রথম অবস্থায় তাদের কাছ থেকেই আমরা বাচ্চাদের রোগের সম্পের্কে প্রায় অর্ধেক তথ্য নিই। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আমরা রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করি। এ সময় অভিভাবকরা শিশুদের প্রতি বাড়তি সতর্কতা নিলে শিশুরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
রামেক-এর এই বিশেষজ্ঞ আরো জানান, ‘শীতে বাচ্চারা শ্বাসকষ্ট সহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ছোট বাচ্চা যেমনঃ একমাসের নিচের বাচ্চা এদের ঠান্ডা লাগলে গোটা শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। অসুস্থ হয়ে মারাও যায়। জন্মের পরে ৬ মাস পর্যন্ত আমরা বাচ্চাদের মায়ের বুকের দুধ খেতে বলি। এ সময় মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই। এটাতেই অর্ধেক অসুখ কমে যায়। সকল রোগের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হিসেবে কাজ করে। ৬ মাস পরে বুকের দুধের পাশাপাশি পারিবারিক স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দিতে হবে। পুষ্টিটা যদি ঠিক থাকে তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হবে- অসুখ-বিসুখ কম হবে। আর সময় মতো ইপিআইয়ের টিকাগুলোগুলো দিতে হবে। এই টিকায় হাম থেকে শুরু করে অনেক রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকে।’
রামেক-এর শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. খান জাহান জানান, ‘এখন নিউমোনিয়া এবং ব্রৎকিওলাইটিসে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারণে এই রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। এ সময় বাচ্চাকে কোনো মতেই ঠান্ডায় রাখা যাবে না। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সব সময় মায়ের বুকের দুধ খেতে দিতে হবে এবং একটু বড় শিশুদের বেশি করে স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। ভোর বেলা বা কুয়াশার সময় বাচ্চাকে কোনোমতেই বাইরে
বের হতে দেয়া যাবে না। করোনার এই মহামারিতে বাইরে ছোট বাচ্চাকে নেয়া যাবে না। বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। মাস্ক বাচ্চাদের করোনাসহ অ্যাজমা, ব্রৎকিওলাইটিস থেকে অনেকভাবে নিরাপদ রাখবে। বাসাবাড়ি ধুলোবালি মুক্ত রাখতে হবে। এ সময় শিশুদের হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে। এবং বাচ্চার আশেপাশে কোনোমতেও ধূমপান করা যাবে না। শিশু কোনো কারণে অসুস্থ মনে হলে দেরি না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
Leave a Reply