“ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত না হলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হতো না”
“পথ পথিকের সৃষ্টি করে না,পথিক ই পথের সৃষ্টি করে”কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই অমর বানী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য কারন প্রতিষ্ঠার পরথেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কখনো কারো দেখানো পথে পথ চলে নাই বরং দেশ ও জাতির প্রয়োজনে ছাত্রলীগই নতুন পথ তৈরি করে জাতিকে পথ দেখিয়েছে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছে।
শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন, জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া, জীবন ও যৌবনের উত্তাপে শুদ্ধ সংগঠন, সোনার বাংলা বিনির্মাণের কর্মী গড়ার পাঠশালা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।বিদ্যার সঙ্গে বিনয়, শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা, কর্মের সঙ্গে নিষ্ঠা, জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেম এবং মানবীয় গুণাবলির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতিক্রম করেছে পথচলার ৭৩ বছর। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি সময়ের দাবিতেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সময়ের প্রয়োজন মেটাতেই এগিয়ে চলা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। জন্মের প্রথম লগ্ন থেকেই ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের সাত দশকের সবচেয়ে সফল সাহসী সারথি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।১৯৪৭ সালে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে পাকিস্তানি কলোনিতে যুক্ত হওয়ার এক বছর পরই বিচক্ষণ বঙ্গবন্ধু তাঁর দুরদৃষ্টি চিন্তার অংশ হিসাবেই ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার এক বছর পর বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী লীগ (তখন ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ)। সেদিন যদি বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা না করতেন বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন সফল হতো কিনা সন্দেহ রয়েছে।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আন্দোলন জোরালো করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল প্রণিধানযোগ্য।১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।১৯৬২ সালে তৎকালীন আইয়ুব খান সরকার কর্তৃক গঠিত শরিফ কমিশন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর লক্ষ্য ও স্বার্থের অনুকূলে একটি গণবিরোধী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিল। সেই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গণআন্দোলন ও গণজাগরণ তৈরি করে। সেই বাষট্টির রক্তঝরা দিনগুলোতে রক্ত ঝরেছে অসংখ্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর।
১৯৬৬ সালে বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সনদ ছয় দফা বাস্তবায়নে শেখ মুজিবুর রহমান আস্থা রেখেছিলেন তরুণ ছাত্রনেতাদের ওপর। তিনি সে সময়কার ছাত্রনেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, জেলায় জেলায় অবস্থান সুদৃঢ় করে ছয় দফার সপক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা সারা বাংলার মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ৬ দফা দাবির গুরুত্ব তুলে ধরেন।
১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ছিল রাজপথের প্রমিথিউস। ছয় দফা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে বিভেদ ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে ছাত্রলীগের শক্ত অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত এ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুস জয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সক্রিয় অংশগ্রহনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন।একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের দীর্ঘ পথচলায় ছাত্রলীগ হারিয়েছে তার সহস্র্রাধিক নেতাকর্মীকে। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের সমাবেশে বলেছিলেন, ‘দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে যে কোনো পরিণতিকে মাথা পেতে বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত। ২৩ বছর রক্ত দিয়ে এসেছি। প্রয়োজনবোধে বুকের রক্তগঙ্গা বইয়ে দেব। তবু সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বাংলার শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করব না।’ তাই তো মুক্তিযুদ্ধে আমাদের প্রাণের সংগঠনের ১৭ হাজার বীর যোদ্ধা তাদের বুকের তাজা রক্তে এঁকেছেন লাল-সবুজের পতাকা, এঁকেছেন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এক সার্বভৌম মানচিত্র।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে এটা বলাই যায় দুরদর্শি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি সময়ের প্রয়োজন মেটাতে সেদিন(১৯৪৮ সালের ৪ ঠা জানুয়ারি)ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা না করতেন ৫২ ভাষা আন্দোলন সফল হতো কিনা সন্দেহ রয়েছে। ৫২ ভাষা আন্দোলন সফল না হলে ৫৪ এর যুক্তফ্রন্টে নির্বাচনের ইতিহাস ভিন্ন হতে পারতো।৫৪ যুক্তফ্রন্টে নির্বাচনের ফলাফল ভিন্ন হলে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পরিবেশ সৃষ্টির হতো না। গণঅভ্যুত্থান না হলে ১৯৭০ এর নির্বাচনের ফলাফল ভিন্ন হতে পারতো। নির্বাচনের ফলাফল ভিন্ন হলে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ হতো না। স্বাধীনতা যুদ্ধ না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বের মানচিত্রে স্হান পেতো না । সুতরাং ছাত্রলীগকে বাদ দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।
পরিশেষে ঘুমের দেশে ঘুম ভাঙাতে
ঘুমিয়ে গেল যারা,সেইসব শহীদদের রক্তের উত্তরাধিকার,মৌলবাদ জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ ও ৭১ এর পরাজিত শক্তি প্রতিরোধে বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে যেই সংগঠনের কর্মীরা রাজপথে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা করেছে সেই সংগঠনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান সকল নেতা,কর্মী সমর্থক,শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক মোবারকবাদ, মুজিবীয় শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সাবেক কর্মী হিসাবে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। আমি গর্ব অনুভব করি আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাদ্দাম হোসেন হল শাখার সভাপতি পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক কমিটির কেন্দ্রঘোষিত সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কেন্দ্র ঘোষিত কমিটির সহ-সভাপতি ছিলাম।
লেখকঃ ইমদাদুল হক সোহাগ,
শিক্ষক,
বঙ্গগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
Leave a Reply