সংস্কারের পর যেতে না যেতেই ফের ফাটল দেখা দিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মুক্তমঞ্চে। স্থাপনাটির পশ্চিম পাশের উপর দিকে প্রায় তিন ফুট দীর্ঘ একটি ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ২০২০ সালের শুরুতে স্থাপনাটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের আগেই দেখা দিয়েছিল বিশাল ফাটল। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে কোনরকম সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দীনকে প্রধান করে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের জন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। যে প্রকল্পের মোট বাজেট ছিল ৫৩ লাখ টাকা। যার কাজ পায় সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে মুক্তমঞ্চের কাজ ছিল অন্যতম এবং সাথে ছিলো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সৌন্দর্যবর্ধন কাজ।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, মুক্তমঞ্চ নির্মাণের সময় ভবন নির্মাণের কোনো নিয়ম মানা হয়নি। পাহাড় কিংবা উঁচু স্থানের ওপর কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে মাটির নিচ থেকে ন্যূনতম ৩০ ইঞ্চি বিম প্রস্তুত করতে হয়। কিন্তু এখানে মানা হয়নি এসব এর কোন নিয়ম।
জানা গেছে, এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় কোনো ধরনের পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই। এমনকি ছিল না নির্দিষ্ট কোনো নকশা। ফলে বিশৃঙ্খলভাবে কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। কাজের মান শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল দপ্তরের কর্তা ব্যক্তিরা ও প্রকল্পের আহ্বায়ক।
বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংগঠন অনুপ্রাস কন্ঠচর্চা কেন্দ্রের সভাপতি সানজিদা ইসলাম বলেন, যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই অডিটোরিয়াম এবং মুক্তমঞ্চ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক পরিবেশ বজায় রাখতে মুক্তমঞ্চের বিকল্প নেই, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত অডিটোরিয়াম নির্মাণ হয় নি। মুক্তমঞ্চ নির্মাণ হওয়ার পর তা পূর্ণাঙ্গ রুপ পাওয়ার আগেই বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়, এবং মেরামত করা হয়, এখন পুনরায় আবার ফাটল নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিবেশ বজায় রাখতে মুক্তমঞ্চের নির্মাণের ত্রুটি গুলো দ্রুত নিরসন করা দরকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস এম শহিদুল হাসান বলেন, ঠিকাদার স্ট্রাকচার করার সময় ফাটল না হওয়ার জন্য একটি সাপোর্টার হিসাবে একটি বিম দিয়েছিল। কিন্তু সৌন্দর্যবর্ধনের কমিটির কথা অনুযায়ী সাপোর্টার ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। যার ফলে এই জায়গা ফাটল দেখা দিয়েছে। যদি করার আগে সৌন্দর্যবর্ধন কমিটি বলত সাপোর্টার দেওয়া যাবে না, তাহলে ঠিকাদার অন্য সিস্টেম স্ট্রাকচার তৈরি করত। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পর বললে তো সব কিছু ঠিক হবে না।
সৌন্দর্যবর্ধনের কমিটি অধ্যাপক সোহরাব উদ্দীন বলেন, মুক্তমঞ্চে কাজ করার সময় কোন জায়গা বিম হবে, কোথায় ব্রিকস হবে সেটা আমি শিক্ষক হয়ে কিভাবে জানব। কিভাবে করলে ফাটল হবে, কোথায় বিম বা পিলার হবে সেইগুলো জানার কথা প্রকৌশলী দপ্তর।
বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোঃ আবু তাহের বলেন, এই মুক্তমঞ্চ হস্তান্তর করার সময় একবার মেরামত করা হয়েছিল। যেহেতু আবার ফাটল দেখা দিয়েছে সেটা আমরা সৌন্দর্যবর্ধন কমিটির সাথে কথা বলব। তবে আমার জানা মতে কন্টাক্টরকে এখনও তার জামানত টাকা ফেরত দেয়া হয় নি। দরকার হলে আমরা আবার মেরামত করব যাতে আর ফাটল না হয়। যদি বড় কোন সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে সেটা আমরা যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করব।
Leave a Reply