শীতে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করনীয়
একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না। অথচ এই দুর্ঘটনাই যেন আমাদের প্রতিদিনের নিত্যসঙ্গী।প্রতিনিয়ত এসব দূর্ঘটনায় ঝরে পরছে হাজারো তাজা প্রান।তিলে তিলে গড়ে তোলা ফুলের মতো সাজানো স্বপ্নগুলো এক নিমিষেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। কত নারী অকালে স্বামী হারিয়ে বিধবা হয়েছে তার কোন হিসাব নেই ।সন্তান হারাচ্ছে পিতা-মাতা, আবার পিতা-মাতা হারাচ্ছে সন্তান। ভাই হারাচ্ছে বোন আর বোন হারাচ্ছে ভাই। স্বামী হারাচ্ছে স্ত্রী আর স্ত্রী হারাচ্ছে স্বামী। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ যেন নিষ্ঠুর মরণ খেলা হয়ে দাড়িয়েছে। অথচ আমাদের একটু সচেতন এবং দায়িত্বশীল হলেই এ মরণ খেলা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার তথ্যমতে,সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৫৫ জন ব্যক্তি প্রান হারাচ্ছে। বাংলাদেশ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, প্রতিবছর সড়ক দূর্ঘটনায় বাংলাদেশে প্রায়
১২,০০০ হাজার মানুষ প্রান হারাচ্ছে আর আহত হয় প্রায় ৩৫,০০০ হাজার মানুষ। কালের আবর্তনে এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বিশেষ করে,শীত মৌসুম আসলেই সড়ক দুর্ঘটনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। শীতের ভোরে শিশির কনা,শীতল মৃদু হাওয়া আর কুয়াশা ধুম্রজালে মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে উঠে দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক। শিশির কনা আর মৃদু ধোয়াচ্ছ পরিবেশের কারণে ঘটে ভয়াবহ হৃদয়বিদায়ক এবং মর্মান্তিক দূর্ঘটনা। বিশেষ করে, পাহাড়ি এলাকার আকাঁবাঁকা মোড়গুলো একেক টা মৃত্যুর ফাঁদে পরিনত হয়।কুয়াশাচ্ছন্ন ঘোলাটে পরিবেশে বিপরীতদিক থেকে আগত গাড়ির প্রকৃতগতি নির্ণয় করা অসম্ভব হয়ে পরে।যার ফলে ঘটে ভয়াবহ দূর্ঘটনা। আকাঁবাকাঁ পথের মোড়গুলোতে নেই কোন দর্পন এবং লাইটিংয়ের ব্যবস্থা।যার পরিপ্রেক্ষিতে দূর্ঘটনার সম্ভবনা আরো বেড়ে যায়।শীতের কুয়াশার মধ্যে গাড়ি চালকদের যেসব বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
১.গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে।
২.ভোরে কিংবা রাতে কুয়াশার জন্য কিছু না দেখতে পেলে গাড়ি বন্ধ করে রাস্তার পাশে সুরক্ষিত জায়গায় দাড়িয়ে যেতে হবে।
৩.গাড়ি চালানোর পূর্বে লুকিং গ্লাসগুলো সঠিক অবস্থানে আছে কিনা তা নির্ণয় করতে হবে।
৪.গাড়ির উইন্ডশিল্ড কিছুসময় পরপর পরিস্কার করতে হবে।
৫.কুয়াশার মধ্যে ফগ বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হবে।
৬.লেন পরিবর্তনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ইত্যাদি।
আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে বেসরকারি পর্যায়ে, সামাজিক পর্যায় থেকে ব্যক্তিগত পর্যায় পর্যন্ত অর্থাৎ প্রত্যেককে তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।সড়ক দূর্ঘটনা এখন জাতীয় মহামারী হিসেবে দেখা দিয়েছে। একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সড়ক দূর্ঘটনা ১ হাজার ৫৯৯ টি বেশি হয়েছে। ২০১৮ সালে ৩ হাজার ১০৩ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৩৯ জন ও ৭ হাজার ৪২৫ জন আহত হয়েছিল।
এ পরিসংখ্যান যেমন দূখঃজনক তেমনি উদ্বেগের কারণ ও বটে।দূর্ঘটনা এড়াতে চালকদের তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি ট্রাফিক আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষনায় দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনার ৫৩% ঘটে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে, ৩৭% চালকের বেপরোয়ার কারণে এবং ১০% গাড়ির ত্রুটির কারণে। আমাদের সচেতনতার বড় অভাব।এমন পরিস্থিতি রোধকল্পে আমাদের করনীয় হলোঃ১.মালিক পক্ষকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চালক নিয়োগ দিতে হবে। ২.লাইসেন্স নেই এমন গাড়ির রোড পারমিট বাতিল করতে হবে। ৩.লাইসেন্স বিহীন চালকদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ৪.ফিটনেসবিহীন ও যান্ত্রিকত্রুটি সম্পুর্ন গাড়ির রোড পারমিট বাতিল করতে হবে। ৫.চালকদের ডোপ টেস্ট করে, গাড়ি চালানোর অনুমতি দিতে হবে।
৬.ট্রাফিক ব্যবস্থার গতি আনতে হবে। ৭.গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে ট্রাফিক কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
৮.ওভারটেকিংয়ের মনোভাব পরিহার করতে হবে। ৯.চালকের গাড়ি চালানো অবস্থায় ফোনে বা যাত্রীদের সাথে কথা বলা যাবে না।
১০.পথচারীদের ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে এবং রাস্তা পারাপারে ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে হবে। ১১.যাত্রীদের প্রয়োজনীয় সেফটি ব্যবহার করতে হবে, যেমন ঃ সিট বেল্ট, হ্যামলেট, মাস্ক সহ ইত্যাদি। ১২.ঝুকিপূর্ণ মোড়গুলোতে দর্পণ এবং লাইটিংয়ের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে। ১৩.বিশেষ করে,শীত মৌসুমে চালক ও পথচারীদের বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।
সর্বোপরি,চালক,পথচারী, যাত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সড়ক দূর্ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।
লেখকঃ হাচান মাহমুদ শুভ,
শিক্ষার্থী,এমবিবিএস ১ম বর্ষ, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ,গাজীপুর।
মেইলঃhasanmahamudshovo9005@gmail.com
Leave a Reply