পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, সমর্থকদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, বিএনপি অফিস ও কর্মীদের উপর দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে নৌকা প্রতিকের সমর্থকরা বলে অভিযোগ বিএনপির। শুক্রবার সকাল থেকে কয়েক দফা হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নিকটাত্মীয় বাবুল হাওলাদারসহ অন্তত ৫জন আহত হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাদুরতলা এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী মোঃ জাকির হোসেনের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় নৌকার মনোনীত মেয়র প্রার্থী বিপুল হাওলাদারের ছেলে বিকাশের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী। বেলা ১১টার দিকে ১নং ওয়ার্ডের অপর সমর্থক দেলোয়ার হোসেনের মেঘনা পরিবহনের কাউন্টার ভাংচুর করে মালামাল তছনছ করে একই বাহিনী। দুপুর ১২টার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নিকটাত্মীয় বাবুল হাওলাদারকে মারধর করে যুবলীগ-ছাত্রলীগ। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে বেলা দেড়টার দিকে পৌর এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর নারী সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। দোষীদের শাস্তির দাবীতে কলাপাড়া থানা চত্বরে জরো হয়ে স্লোগান দেয় নারীরা। কয়েক দফা হামলা-সংর্ঘষের ঘটনায় কলাপাড়া পৌর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত জনতা উপজেলা আওয়ামীলীগ অফিস ঘেরাউপূর্বক ভাংচুর করে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী দিদার উদ্দিন আহমেদ মাসুম’র ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে নৌকা প্রতিকের সমর্থকরা। এসময় একটি ককটেল বিস্ফোরন ঘটানো হয়। ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে লাগানো দুটি সিসি ক্যামেরা ও থাই গ্লাস ভেঙ্গ ফেলা হয়। একইদিন সন্ধ্যায় পৌর শহরের নতুন বাজারস্থ বিএনপি কার্যালয়ে হামলা ভাংচুর করা হয়। এসময় চেয়ার ছুড়ে মারায় ১০/১২ জন আহত হয় বলে দাবী করেন বিএনপির প্রার্থী হাঝি হুমায়ন সিকদার।
স্বতন্ত্র প্রার্থী দিদার উদ্দিন আহমেদ মাসুম এ বিষিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, “শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিপুল চন্দ্র হাওলাদারের ছেলে বিকাশ চন্দ্র হাওলাদার এবং ভাই স্বপন চন্দ্র হাওলাদারের নেতৃত্বে আসাদুজ্জামান শুভ, আলিফ মাহমুদ রুদ্র, সৌরভ শিকদার, অমি গাজী, তাপস সরকার, বিবেক হাওলাদার, রাকিবুল ইসলাম রাকিব, মেহেদী হাসান রাতুল, মিঠুন চন্দ্র সরকার, শেখর চন্দ্র মন্ডল, শওকত হাওলাদার, মো: মাসুম প্যাদা, কাশেম, মো: পারভেজ, মো: জিহাদ মীরা, নয়ন মিত্র , মিন্টু মল্লিক, আল আমিন, মো: হান্নান ব্যাপারী, সহ আরও বহিরাগত ৩০/৪০জন মিলে ২০ (বিশ) টি মোটরসাইকেল সহযোগে মহড়া করে কলাপাড়া পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় আমার কর্মী সমর্থকদের প্রাণনাশের হুমকি ধামকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমার কর্মী মো: দেলোয়ার হোসেনের পরিচালিত ০১ (এক) নং ওয়ার্ড বাস স্ট্যান্ডে অবস্থিত ঢাকাগামী মেঘনা পরিবহনের এবং উত্তরবঙ্গ গামী শামীম পরিবহনের টিকেট কাউন্টারে হামলা চালিয়ে লোহার রড, লাঠি, হকিস্টিক, ধারালো অস্ত্র দিয়ে চেয়ার টেবিলসহ সকল আসবাবপত্র এবং কাগজপত্র ধংশ করে, ০৯ (নয়) নং ওয়ার্ড কলেজ রোড এলাকায় মো: জাকির মুন্সীর মালিকানাধীন রাফি মেডিকেল হল লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করে ভাংচুর করে, ০৯ (নয়) নং ওয়ার্ড নিবাসী মো: মিজান এবং মো: ফয়সাল এর বাড়িতে ভাংচুর করে। ওই সন্ত্রাসী বাহিনীই ০১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো: জসিম, মো: রিপন ঘরামী, মো: সাগর ও মো: নূর হোসেনকে ফায়ার সার্ভিস রোডে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে যারা বর্তমানে কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। ০৭ নং ওয়ার্ড নিবাসী মো: মনির, মো: মাসুদ, মো: মাইনুল ও মো: আল আমিনকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যায়। এই সকল কারণে আমার সকল কর্মীরা প্রাণ সংহারের চিন্তায় ভীষণ রকম উৎকন্ঠায় ভুগছে। বর্তমানে আমার সকল কর্মী সমর্থকরাই ভীষণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কলাপাড়া পৌরবাসীর মধ্যে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে ভীষণ আতঙ্ক বিরাজ করছে। কলাপাড়াতে বেশ থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যার অতি দ্রুত বিহিত প্রয়োজন। কলাপাড়া পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠূ ও নিরপেক্ষ ভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিপুল চন্দ্র হাওলাদারের পক্ষে নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘনের জরুরি প্রতিকার তথা তার পক্ষের সকল রকম সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিরসনে প্রয়োজনীয় আইনি ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার একান্ত মর্জি হয়।”
এ বিষয়ে নৌকার প্রার্থী বিপুল হাওলাদার সাংবাদিকদের কাছে পাল্টা অভিযোগ করেন যে কতিপয় দুস্কৃতিকারী উপজেলা আওয়ামীলীগের অফিস ভাংচুর করেছে।
কলাপাড়া থানার ওসি খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পুলিশ সকল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়নস্ত্রনে আনে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Leave a Reply