বাংলা ভাষার অস্তিত্ব রক্ষায় ৫২’তে রফিক, জব্বার, বরকত বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলো। সেই থেকে আমরা ৭১’এ পেয়েছিলাম চূড়ান্ত বিজয়। বাংলা ভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে আমাদের সকলের প্রচেষ্টার বিকল্প নেই। এ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ভাষার প্রতি ভালোবাসা
নিজের ভাষার প্রতি কার না ভালবাসা থাকে? আর তা যদি হয় রক্তের বিনিময়ে কেনা। বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা। যে ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছিলো আমাদের ভাই রফিক, জব্বার,সালাম, বরকত। ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে নাই। কিন্তুু আমরা কি পেরেছি সেই ভাষার মর্ষাদা সমুন্নত রাখতে? আমরা তো সারক্ষণ হিন্দি, ইংরেজি চর্চায় ব্যস্ত সময় কাঁটায়। পড়ালেখা করছি সঠিক ইংরেজি শিখার জন্য। বাংলা ইংরেজি মিলে কথা না বললে দাদা বাবুর মতো ভাব আসে না। উচ্চ শিক্ষাসহ সরকারি সব জায়গায় ইংরেজি ভাষার জয়গান। হ্যাঁ বর্তমান যুগের সাথে চলতে গেলে বিদেশি ভাষাকে গুরুত্ব দিতে হবে তা যেনো কোনোভাবেই মাতৃভাষাকে কম গুরুত্ব দিয়ে না হয়। শুধু কাগজে – কলামে নয় অন্তরে স্থান দিতে হবে বাংলাকে। শিকড় ছেড়ে কান্ডকে গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। সব কিছুর উর্ধ্বে মাতৃ ভাষাকে ভালোবাসতে হবে।
(রাজু আহমেদ, আইন ২য় বর্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।)
মাতৃভাষা এবং সম্ভাবনা
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভাষা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। মাতৃভাষার প্রচলন কেবল ভাষাগত বৈচিত্র্য, বহু ভাষা ভিত্তিক শিক্ষাকেই উৎসাহিত করবে না সাথে তা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনুধাবন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে চেতনার অগ্নিমশাল। বর্তমানে এই পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ভীর সরিয়ে জ্ঞানের সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রয়োগ বৃদ্ধিতে সাধ্যমতো প্রয়াস করা বাঙালী হিসেবে কর্তব্য হয়ে দাড়ায়। বিশ্বের জ্ঞান ভাণ্ডারকে মাতৃভাষায় চর্চার মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের নিকট যদি পৌঁছে দেয়া যায় তাহলে বিজ্ঞান, সংস্কৃতির উন্নতির সাথে সাথে মাতৃভাষার শক্তি বাড়িয়ে নতুন শতকের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা সম্ভব ।
(হাফছা ইয়াসমিন, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।)
৫২’এর আন্দোলন ৭১’এ স্বাধীনতা
২১ ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে এক কথায় বলতে পারি, একুশে ফেব্রুয়ারি হলো বাঙালি জাতির পরিচয় চিহ্ন। তবে এটি তো এক কথায় বলার বিষয় নয়। একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা বিভিন্নভাবে আমাদের ভিত্তি নির্মাণ করেছে।
‘৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্র আন্দোলন আমাদের দেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক বটে, যা তখনকার রাজনীতির ধারাকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্র আন্দোলনকে শুধু স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে নিছক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটা পর্যায় মনে করলে ভুল বোঝা হবে। সামগ্রিকতায় একুশকে দেখা হবে না। শুধু ভাষার জন্য দাবি ভিত্তিক আন্দোলন মনে করলেও খণ্ডিত করে দেখা হবে। অবশ্যই এটা ছিল গণতান্ত্রিক সংগ্রামের অংশ। অবশ্যই তা ছিল ভাষার জন্য সংগ্রাম। কিন্তু ভাষা এখানে এসেছে বাঙালি জাতীয় সত্তার প্রধান পরিচয় হিসেবে। ভাষা তো জাতীয় পরিচয়ের প্রধানতম দিক। একুশের মধ্য দিয়েই পাকিস্তান-পরবর্তী যুগে প্রথম বাঙালি জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল। আর তারই পরিণতি ছিল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ।
(শিশির আসাদ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি।)
বিদেশী ভাষার খপ্পরে মাতৃভাষার জলাঞ্জলি
মাতৃভাষা নিয়ে তরুণ প্রজন্ম যেন ভাবতেই ভুলে গিয়েছে। তাদের সব ভাবনা-চিন্তার কেন্দ্র বিন্দু যেন বিদেশী কোন এক ভাষা। বিদেশী ভাষাতে পরিচয় দিতেই যেন তারা গর্ববোধ করে। অথচ যে ভাষার জন্য আন্দোলন হয়েছে ৫২’তে, বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছে দামাল ছেলেরা, সে ভাষার জন্য আমাদের গর্বিত হওয়ার কথা।
আমার কথা হলো নিজেকে স্মার্ট প্রমান করার জন্য কেন বাংলাকে ভুলতে হবে? তাই তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার অনুরোধ জীবনে সফল হওয়ার জন্য যা করা দরকার তা করবে কিন্তু ভুলবে না বাংলাকে, বইমেলা আর শহিদ মিনার। কেননা তোমরাই বাংলাকে এগিয়ে নিতে পারবে।
(ফারজানা আক্তার ঐশী, বগুড়া ক্যান্টমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ )
Leave a Reply