আগামী ঈদের পরে একযোগে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হলে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে। এছাড়া ঈদের আগে-পরে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ওই সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী একে অপরকে সংক্রমিত করতে পারে। এই সংক্রমণ এড়াতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার মতো সক্ষমতা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের নেই।
এসব কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তে কিছুটা বিব্রত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যেতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানা সম্ভব সেটা নিয়ে সন্দিহান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তের পর সোমবার রাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি বিশ্লেষণে একটি সভা করেন। এতে দেশের টিকার মজুদ, প্রাপ্যতা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পরিকল্পনা অনুসারে দেশের সব শিক্ষককে এই মুহূর্তে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকাদান সম্ভব নয়।
সেটি দিতে গেলে, ইতোমধ্যে যারা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ সময়মতো দেওয়া সম্ভব হবে না। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে সারা বিশ্বের চাপ থাকায় টিকার প্রাপ্যতায় বিলম্ব দেখা দিয়েছে।
টিকা পেতে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। কারণ চীনের টিকার দাম প্রতি ডোজ ১২ ডলার। অর্থাৎ দুই ডোজ টিকার দাম পড়বে ২৪ ডলার। এত দামে টিকা কেনা সম্ভব নয়। ঈদের আগে ও পরে সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই ঈদের পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে সেটিও ভাবার বিষয়।
সোমবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, ঈদুল ফিতরের পর আগামী ২৪ মে খুলবে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়। এর এক সপ্তাহ আগে ১৭ মে খুলে দেওয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল। এই সময়ের মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার আবাসিক ছাত্রছাত্রীকে টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদেরও টিকা দেওয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ক্যাম্পাস খোলার আগে কোনো ধরনের পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। ইতিমধ্যে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই হলে উঠে গেছেন তাদের অবিলম্বে হল ত্যাগের আহ্বান জানান। তিনি ছাত্রছাত্রীদের আশ্বস্ত করে বলেন, ক্যাম্পাস খোলার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে মিল রেখে বিসিএসে আবেদন ও পরীক্ষার তারিখ পেছানো হবে।
করোনার কারণে বয়স অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ায় কোনো পরীক্ষার্থী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, এ বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নেবে। করোনা মহামারীর কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ আছে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে। এছাড়া কলেজ এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল আছে প্রায় ৩৮ হাজার। প্রাইমারি ও কেজি স্কুল মিলে আছে এক লাখ ২৫ হাজার।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক গণমাধ্যম’কে বলেন, দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে অনেক শিক্ষক আছেন। আমরা ধরেই নিচ্ছি এদের বয়স ৪০-এর বেশি। তাই এমনিতেই তারা পর্যায়ক্রমে টিকা পাবেন। তবে শিক্ষার্থী যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে তাদের টিকা দেওয়ার সুযোগ নেই।
অন্যদিকে যাদের বয়স ১৮ বছরের ওপরে তাদের বিষয়ে সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তিনি বলেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুললে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলতে হবে। কিন্তু হলে শিক্ষার্থীদের পক্ষে স্বাস্থ্যবিধি কতটা মেনে চলা সম্ভব সেটি বলা কঠিন। তিনি বলেন, অনেক দেশেই নতুন স্ট্রেইনে সংক্রমণ বাড়ছে। এমনকি ভারতের মহারাষ্ট্রেও বাড়তে শুরু করেছে।
ফলে তারা আবার বিধিনিষেধ আরোপের দিকে যাচ্ছে। তাই আমাদের আরও কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এতদিনের চেষ্টায় করোনা সংক্রমণ একটি নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে এসেছে। সেটি যেন আবার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে না পড়ে।
শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে সংক্রমণ আবার বাড়লে দেশের কি অবস্থা হবে। জাহিদ মালেক বলেন, আগের ৭০ লাখ টিকার পাশাপাশি সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় আরও নতুন ২০ লাখ টিকা দেশে এসেছে। বর্তমানে দেশে চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের টিকা দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষক, বিমানের পাইলট, জাহাজের ক্রুসহ আরও অন্য ফ্রন্টলাইনারদের টিকা দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্তু আসার কথা ছিল ৫০ লাখ, এসেছে মাত্র ২০ লাখ। টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে। সেরামের ওপর অনেক চাপ রয়েছে। সময়মতো টিকা না এলে পরিকল্পনা অনুযায়ী টিকাদান বিলম্বিত হবে।
এ প্রসঙ্গে করোনা সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সদস্য ও আইইডিসির উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সংক্রমণের হার যদি কমপক্ষে দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের নিচে থাকে তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে টানা চার সপ্তাহ সংক্রমণের হার ৫-এর নিচে রয়েছে।
তাই পরীক্ষমূলকভাবে ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়, কালেজ, মাধ্যমিক স্কুল এবং শেষে প্রাথমিক স্কুল খোলা যেতে পারে। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্য মেনে এটা করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে সরকারকে অর্থ ব্যয় করতে হবে।
কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। সংক্রমণ বাড়লে আবার বন্ধ করেছে। তাছাড়া ঈদের আগে-পরে সংক্রমণ বাড়তে পারে। তাই সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু ও পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে।
Leave a Reply