বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি কর্তৃক আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ধারাবাহিক আলোচনা সিরিজের অংশ হিসেবে গত ৩০ মার্চ রাত আটটায় “বঙ্গবন্ধু: গৌরবগাঁথা ও বিজয় ” শিরোনামে ভার্চুয়াল আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক আকতার হুসাইন এবং প্রবন্ধের উপর প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন জনাব শেখ শামস মোরসালিন, সহযোগী অধ্যাপক ,আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ড. হাসিবুর রহমান ,সভাপতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় । শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান এর সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক জনাব সাদ্দাম হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য, প্রফেসর ডঃ এ কিউ এম মাহবুব।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ আবু সালেহ । স্বাগত বক্তব্যে ডক্টর সালেহ বলেন বঙ্গবন্ধুর মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই মাত্র নয় মাসে, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি । বিশ্বের অনেক দেশে দশকের পর দশক স্বাধীনতা যুদ্ধ করলেও বঙ্গবন্ধুর মতো একজন বলিষ্ঠ নেতৃত্ব তাদের না থাকায় আজও তারা স্বাধীন হতে পারেনি । বঙ্গবন্ধু নিয়মতান্ত্রিক ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই স্বাধীনতার সংগ্রামকে ফলপ্রসূ করেছেন এবং বিজয় এনে দিয়েছেন ।
উক্ত আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক অধ্যাপক ডক্টর আক্তার হোসেন বলেন, বাঙালি জাতির জন্য সংগ্রামের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু জাতির জনককে পরিণত হয়েছেন, তিনি বলেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর স্বাধীনতা সংগ্রাম করছণ, কিন্তু তার বিজয়ী হতে পারেন না। বঙ্গবন্ধু কিন্তু আমাদের সেই বিজয় এনে দিয়েছেন । বঙ্গবন্ধু তার অর্জনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে এমন উচ্চতায় পৌঁছেছেণ, তাঁর মত নেতা বিশ্বে পাওয়া বেশ দুষ্কর । ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে তিনি সমগ্র জাতিকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিতে পেরেছিলেন সফলভাবে । সমগ্র জাতিকে তিনি একই লক্ষ্যে উদ্দীপ্ত করেছিলেন , যার ফলে সকলে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন । তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশকে পুনর্গঠন এর উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিস্থাপন করেন , যার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় । মাত্র এক বছরের মাথায় সংবিধান প্রণয়ন করেন , যেই সংবিধান শুরু হয়েছে এভাবে “আমরা এদেশের জনগণ, আমাদের জন্য সংবিধান প্রণয়ন করলাম , আমরা তা গ্রহণ করলাম এবং আমরাই আমাদের জন্য তা বলবৎ করলাম” ।
উক্ত আলোচনায় আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন জনাব শেখ মোরসালিন । তিনি তার বক্তব্যে বলেন , বঙ্গবন্ধুকে যে উপমায় আখ্যায়িত করি না কেন, সেটি তার জন্য কম হয়ে যায় । কেননা তিনি তার আপন মহিমায় উদ্ভাসিত । বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন এটি তার একটি বিরাট অর্জন । বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে স্বল্প সময়ের মধ্যে মিত্রবাহিনীকে ফেরত পাঠাতে পেরেছিলেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বিরল দৃষ্টান্ত , কেননা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী তে আমেরিকান সৈন্যরা এখনো জাপান জার্মানিতে অবস্থান করছে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা পরবর্তী অল্প সময়ের মধ্যেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি অর্জন করতে পেরেছিলেন এটিও তার একটি বড় অর্জন । আবার ঠান্ডা যুদ্ধকালীন সময়ে কোন ব্লকে না গিয়ে জোট নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে তিনি কূটনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন । তিনি তার শাসনামলে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক রূপকল্প ভিত্তি স্থাপন করেছেন, তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ মানবিক গুণ সম্পন্ন নেতা , অভিভাবক ও সংগঠক। তার অসাধারণ সাংগঠনিক গুণাবলীর ফলাফল আজও আমরা ভোগ করছি । অনুষ্ঠানের অপর আলোচক ড.হাসিবুর রহমান বলেন বঙ্গবন্ধুর গৌরবময় অর্জন মূলত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদের সামনে প্রতিফলিত হয় । তিনি বলেন ১৯৪৭ এ পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছিল সেটি ছিল ইতিহাসের একটি অনিবার্য ফলশ্রুতি , এটি কোন জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ছিল না। মূলত ব্রিটিশদের “ভাগ কর ও শাসন কর” নীতির ফলে হিন্দু ও মুসলমানদের মাঝে বিভেদ তৈরি হয়েছিল, তার অনিবার্য ফল হিসেবে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল । বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা যিনি তাঁর জীবদ্দশায় স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, যার মূল ভিত্তি ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধু একজন নেতা বা ব্যক্তি নন তিনি ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান, তিনি এমন একজন মহান মানুষ , অতি সাধারণ মানুষকে তিনি অসাধারণ মূল্য দিতেন , তিনি ছিলেন একজন বিশ্ব বরেণ্য নেতা, তিনি তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা একজন নেতা , যিনি পরবর্তীতে বিশ্ব নেতৃত্বে পরিণত হন । ৭ মার্চের ভাষণে তিনি সাধারণ মানুষের মনের কথা নির্দ্বিধায় তুলে ধরেছেন , আজ তা সাড়া পৃথিবীতে স্বীকৃত । তিনি জানতেন কখন কোন সিদ্ধান্ত কিভাবে নিতে হয়। তিনি পাকিস্তানের কাছে কি নিয়েছো , কি দিবি এবং কখন যাবে এই দাবি গোলটেবিলে উত্থাপন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে প্রচন্ড দেশপ্রেম ও জনগণের প্রতি ভালোবাসা ছিল। বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
উক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি এবং ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব আবুল বাশার শিপন খলিফা । তিনি বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৬৯ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ‘শেখ মুজিব’ উপাধিতে ভূষিত করা হয় ,পরবর্তীতে বাঙালি জাতির পিত্ ২০০৪ সালে বিবিসির জরিপে তাকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে অভিহিত করা হয়, ২০১৯ সালের ১৬ ই আগস্ট জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনায় কূটনীতিকরা তাকে ‘বিশ্ববন্ধু’ হিসেবে অভিহিত করে । কাজেই এটাও তার গৌরবেরি একটি অংশ যেখানে তিনি বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ব বন্ধুতে পরিণত হয়েছেন ।
অনুষ্ঠানে সর্বশেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান এবং তিনি আলোচনার সমাপ্তি ঘোষণা করেন
Leave a Reply