ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় গত ৫ এপ্রিল রাতে গুজবে সহিংসতার ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পাঁচটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৬১ জনকে এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাত আরও প্রায় ৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ শনিবার (১০ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত এই ঘটনায় মোট ৬১ জনকে আটক করেছে। গ্রেপ্তার এড়াতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে।
উপজেলার সোনাপুর, রামকান্তপুর, ভাওয়াল ও মাঝারদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায়িএলাকা পুরুষ শূন্য, দুএকজন চোখে পরে এরা বেশিরভাগ শিশু, বৃদ্ধ ও নারী। নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়, তবে পুলিশের ভয়ে অন্যত্র পালিয়ে আছে। এছাড়াও করোনাকালীন লকডাউন থাকায় রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা হয়ে পরেছে। রাস্তায় তেমন কোন যানবাহন চোখে পরে না।
৫ এপ্রিল রাতে গুজবে তাণ্ডবের ঘটনায় ৬ এপ্রিল রাতে প্রথম মামলাটি করেন, সালথা থানা পুলিশের এসআই মিজানুর রহমান, ওই মামলায় ৮৮ জননের নাম উল্লেখ্য করে আরও ৩/৪ হাজার জনকে আসামি করা হয়।
এছাড়া গত ৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার নতুন আরও চারটি মামলা হয়েছে তার একটি করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মাতুব্বর। এ মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আরও ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরেকটি মামলা করেছেন সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসিব সরকারের গাড়ি চালক মো. হাশমত আলী। এই মামলায় ৫৮ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩ থেকে ৪ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
অপর মামলাটি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী সমীর বিশ্বাস। এ মামলায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ৩ থেকে ৪ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
আরেকটি মামলাটি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি চালক মো. সাগর সিকদার। এ মামলায় ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে তিন থেকে চার হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
সালথা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আশিকুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মোট গ্রেপ্তার ৬১ জনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে রিমাণ্ড চেয়ে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সোপর্দ করা হয়। এর মধ্যে ২৬ জনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। কয়েকজনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও রিমান্ড চাওয়া হবে। এই ঘটনায় পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সালথায় তাণ্ডবের ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর একটিতে প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. তাসলিমা আলীকে অপর কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম মোল্লাকে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই দুই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
গত সোমবার ৫ এপ্রিল সোমবার ফরিদপুর উপজেলায় লকডাউন কার্যকর করা না করা নিয়ে স্থানীয় উত্তেজিত জনতার মাঝে গুজব ছড়িয়ে প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী তাণ্ডব ও ধ্বংশলীলা চালায়, তাণ্ডবলীলা শেষে বর্তামানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার সময় উপজেলা পরিষদ ও থানা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
Leave a Reply