জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনাকালীন (মার্চ,২০২০ – জুন,২০২১) ইন্টারনেট বিল বাবদ খরচ হয়েছে ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়াও দুই লাখেরও অধিক টাকা ব্যয় করা হয়েছে ইন্টারনেট খাতের বিভিন্ন সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ। ‘বিডি রেন’ এবং স্থানীয় ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘ত্রিশাল নেট’ থেকে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণের মাধ্যমে এই ব্যয় দেখানো হয়েছে।
দেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিডি রেন এর সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে চুক্তিবদ্ধ করিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। ৩ টি ভাগে এই চুক্তি বাস্তবায়ন করেছে ইউজিসি। ‘সি’ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ৪০০ এমবি/পিএস এর ইন্টারনেট সেবা পেয়ে থাকে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। যার মাসিক খরচ ২ লাখ টাকা। এই বিল তিন মাস পরপর প্রদান করা হয় এবং ইউজিসি নিজেই এই বিল পরিশোধ করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনেট ব্যবহার খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে আগেই এই অর্থ কেটে রাখে ইউজিসি। এই সেবা প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাধ্যতামূলক। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করতে না চাইলেও তাকে নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে দিতে হবে দুই লাখ টাকা।
২০২০-২১ সালের ব্যয় খাতে দেখা গিয়েছে, “নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবার জন্য বিডি রেন এর সার্ভিস থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘ত্রিশাল নেট’ থেকে বাড়তি ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা ক্রয় করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যার প্রতিমাসে খরচের পরিমাণ ৭৫ হাজার টাকা, বছর শেষে এটি গড়িয়েছে ৯ লাখ টাকায়। এছাড়াও ইন্টারনেট খাতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ডিভাইস ক্রয় ও সংস্কার কাজে বছরে ব্যয় করা হয়েছে দুই লক্ষেরও বেশি টাকা।” উপাচার্যের বাসভবন, ৩টি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমেটরি, দুটি আবাসিক হল, ২৩ টি একাডেমিক বিভাগসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনেট সেবার আওতায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দাপ্তরিক কার্যক্রম এবং আবাসিক হল করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ ছিলো। স্বাভাবিক সময়ের মতো বন্ধের সময়েও চালু ছিল ইন্টারনেট ক্রয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বন্ধ ক্যাম্পাসে প্রতিদিন গড়ে সর্বোচ্চ ৩-৪ ঘন্টা ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়েছে। আরেকটি কেন্দ্রভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে শুধুমাত্র উপাচার্যের বাসভবন এবং ৩ টি ডরমেটরি সক্রিয় ইন্টারনেট সেবা নিয়েছে। যার ব্যবহৃত ডাটার পরিমাণ প্রতি মাসে গড়ে ৪ হাজার জিবি প্রায়। করোনাকালীন বন্ধের এই সময়ে এতো টাকার ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করাকে অন্যায় এবং রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় বলেছেন একাধিক শিক্ষক এবং কর্মকর্তা।
বন্ধ ক্যাম্পাসে ইন্টারনেট খাতে অর্থ ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, এই নিয়ে আলোচনা আমাদের হয়েছে। তাই এটি কিভাবে সমাধানে আনা যায় সেই লক্ষ্যে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এই নিয়ে নতুনভাবে কাজ করবে। তাছাড়া ইতোমধ্যে ইন্টারনেট খাতে ব্যয় কমানোর জন্যে বিভিন্ন প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে আমাদের মধ্যে আলোচনা চলমান রয়েছে।
আইসিটি সংশ্লিষ্ট কমিটির আহবায়ক ড. মোঃ সেলিম আল মামুন বলেন, এই বন্ধ সময়েও একই খরচ হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আমি খোজ নিয়ে দেখবো। এছাড়া কিভাবে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সেবা প্রদাণ করা যাবে সেটি নিয়েও কাজ করা হবে।
নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আল জাবির বলেন, আমি নিজে সপ্তাহে ১০ জিবি কিনে ইন্টারনেট ব্যবহার করছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে এই খাতে সেই পরিমাণ সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমস্যাটির সমাধান করবে বলে আশা করি।
ইন্টারনেট খাতে অর্থ ছাড় নিয়ে অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক ড. মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এই নিয়ে কথা বলেছিলাম। পূর্বের ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সেটি করেছি। যার মধ্যে বিডি রেন এর বিল আমাদের দিতে হয় না। এটি বাজেটের শুরুতেই ইউজিসি কেটে রেখে দেয় আমাদের এই খাতের মোট বরাদ্দ থেকে। আমরা কেবল স্থানীয়ভাবে যে ইন্টারনেট সেবা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করে সেটির বিল পরিশোধ করি।
Leave a Reply