জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নাম্বার টেম্পারিং এর অভিযোগ এনে দুই ঘন্টা তালাবন্দি করে রাখে স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার(২৯ মার্চ) বেলা ১১টা থেকে স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা খাতা পুনর্মূল্যায়ন এর দাবীতে ও নাম্বার টেম্পারিং এর অভিযোগ এনে বিভাগ প্রধানের কক্ষের সামনে অবস্থান নেয়।
গণমাধ্যমকে দেয়া শিক্ষার্থীদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার নম্বর মূল পরীক্ষা শুরুর আগে প্রকাশ করার নিয়ম থাকলেও একক সিদ্ধান্তে বিভাগটির প্রধান নজরুল ইসলাম তা প্রকাশ করেন না। ওই শিক্ষক পরীক্ষার খাতা হারিয়ে ফেলার কারণে ৩ বার একটি ইনকোর্স পরীক্ষায় বসতে হয়েছিলো বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এমনকি বিভাগ থেকে কোন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে কিভাবে শিক্ষক হয় তা দেখা নেয়ার হুমকিও দেয় নজরুল ইসলাম বলে অভিযোগ তুলেছে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীরা।
অর্থনীতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ৫১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পাঠদান চলে। যাদের মধ্যে কেউ ৩.৫০ পেয়ে অতিক্রম করতে পারেনি। আন্দোলনে অংশ নেয়া এক শিক্ষার্থী মনির বলেন, শুরু থেকে আমাদের ফার্স্ট গার্ল এমনকি পুরো বিভাগে যার রেকর্ড মার্ক তাকেও নাম্বার কমিয়ে দিয়েছে। নজরুল স্যার আমাদের গালমন্দ করে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে বলে আমাদের ব্যাচ থেকে শিক্ষক হতে চাইলে তিনি দেখে নেবেন। স্যারের এই কথার প্রভাবই আজকের আমাদের এই ফলাফল। আমরা নিশ্চিত খাতা পুনরায় মূল্যায়ন করলে আমাদের রেজাল্টের সিজিপিএ বাড়বে। অনেকেই চাকুরীর বাজারেও নামতে পারবে। উনার একক স্বচ্ছাচারিতা থেকে আমরা মুক্তি চাই।
স্নাতক পর্যায়ে বিভাগটিতে রেকর্ড মার্ক পাওয়া শিক্ষার্থী জারমিনা রহমানক প্রধানমন্ত্রীর স্বণপদকের জন্যে মনোনিত হয়েছে। সেই শিক্ষার্থীকেও নাম্বার টেম্পারিং করে ৩.৪৫ দিয়েছে প্রফেসর নজরুল ইসলাম। ফলাফল প্রকাশ নিয়ে শিক্ষার্থী জারমিনা রহমান বলেন, স্যারদের কোথাও ভুল হতে পারে। আমি পুনরায় মূল্যায়ন করার অনুরোধ জানাই। আমি ভালো পরীক্ষা দিয়েছি । আমার যে ফলাফল এসেছে তা প্রত্যাশিত নয়।
রাসেল নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ফলাফল পুনরায় মূল্যায়ন না হলে আমরা এই সার্টিফিকেট নেবো না। সার্টিফিকেট না নেয়ার কথা বললে বিভাগটির প্রধান নজরুল ইসলাম বলেন ফলাফল প্রকাশের কারণে এখন থেকে তোমরা আমাদের শিক্ষার্থীই না। যা পারো করে ফেলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার। পারলে আমার কিছু করে দেখাও বলে মন্তব্য করার কথাও জানায় এই শিক্ষার্থী।
তবে এই বিষয়ে বারবার যোগাযোগ করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি বিভাগটির প্রধান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলামের। শিক্ষার্থীদের অবস্থানের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে প্রক্টর। এবিষয়ে প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনেছি। একদিনের সময় চেয়েছি আমরা। উপাচার্য স্যারকে আমরা জানাবো এবং বুধবার সকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন উপাচার্য স্যার । আমাদের কথা শুনে আশস্ত হয়ে বুধবার সকালে পর্যন্ত আন্দোলনে না যাবার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছে তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, অনুষদে সিনিয়র শিক্ষক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে যায় এমন কোন কথা বলা যায়না। উনি ক্লাসের থেকে বেশী ব্যস্ত শিক্ষক রাজনীতিতে। ৬ মাসের কোর্স ৪-৫টি ক্লাস করিয়ে পরীক্ষায় বসান শিক্ষার্থীদের। যার কারণে শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্থ।
গত সোমবার প্রকাশিত হয় ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর চূড়ান্ত ফলাফল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থী জারমিনা রহমান আমাদের প্রয়াত শিক্ষক সহকর্মীর মেয়ে। সেই শিক্ষকের সঙ্গে নজরুল স্যারের সম্পর্ক ছিলো বৈরী। সেটির প্রভাবও পরতে পারে মেয়েটির ফলাফলে। এমন ঘটনা দেখে শিক্ষক হিসেবে আমারো লজ্জা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগে বিভাগটিতে একাধিক শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা একই রকম অভিযোগ সহ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে বিক্ষোভ ও তালা লাগিয়েছিলো বিভাগটিতে। বারবারই উপাচার্যের হস্তক্ষেপে সাময়িক সমাধান আসলেও স্থায়ী সমাধান আসেনি। বারবার একাই বিভাগ প্রধানের দায়িত্ব পালন করার কারণে স্বচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ তুলেছে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। গণমাধ্যমকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় এর আগে সমালোচনায় পড়ে আলোচিত হয়েছিলেন এই শিক্ষক।
Leave a Reply