জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পরিচালনার নিয়ম অনুযায়ী বার্ষিক মৌখিক পরিক্ষার সময় বহিঃস্থ শিক্ষকের উপস্থিতিতে পরীক্ষা গ্রহণের নিয়ম থাকলেও মানা হয়নি এই পরীক্ষাবিধি বলে অভিযোগ তুলেছে শিক্ষাবর্ষটির শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩০ মার্চ) বিকাল ৩ টায় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা নাম্বার টেম্পারিংয়েরর অভিযোগ এনে সমাধান চেয়ে উপাচার্যের কাছে অভিযোগপত্র জমা ও সাক্ষাৎ করেছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিভাগ পরিচালনা করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ধ্বস নামানোর অভিযোগও তুলেছে শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ৭টি সমস্যার কথা জানিয়ে উপাচার্যের কাছে অভিযোগপত্র জমা দেয়। অভিযোগে উল্লেখিত সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার নম্বর প্রকাশ না করা। স্নাতকোত্তর শ্রেণীর মৌখিক পরীক্ষায় বহিঃস্থ শিক্ষকের অনুপস্থিতি। একজন শিক্ষকের একাধিক কোর্স গ্রহন। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অনভিজ্ঞ শিক্ষকদের ক্লাস গ্রহণ। থিসিস ও গবেষণা প্রদাণে বিভাগের শিক্ষকদের অনীহা। শিক্ষকদের অসহিষ্ণু আচরণ এবং মাত্রাতিরিক্ত সেশনজট।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠকে বিভাগ প্রধানের স্বেচ্ছাচারিতার কথা জানিয়ে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে অনুরোধ জানায় সমাধান চাওয়া শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, শিক্ষার্থীদের ফলাফল নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা শুনে আমি তাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছি। তাদের সংকটগুলো জানার চেষ্টা করেছি। খুব দ্রুতই সমস্যা সমাধানে আমি কাজ করবো। ৭দিন পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমি আবার বসবো। আইনের মধ্যে যা করার থাকবে সেটিই করা হবে।
উপাচার্যের উপর আস্থা রেখে আগামী ৭ দিন পর পুনরায় স্বাক্ষাতে আসবেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী তুষার বলেন, স্যার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। খাতা পূনমূল্যায়ন সম্ভব নয় বলে জানান স্যার। তবে খতিয়ে দেখে যদি কোন সমস্যা পাওয়া যায় সেবিষয়ে আইনের মধ্য থেকেও ব্যবস্থা নেবে বলেও জানিয়েছে স্যার।
অর্থনীতি বিভাগের সাবেক প্রয়াত শিক্ষক হাবীবুর রহমানের সঙ্গে বর্তমান বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলামের দ্বন্দের বলি হয়েছে প্রয়াত হাবিবুর রহমান মেয়ে জারমিনা রহমান। স্নাতক শ্রেণীতে বিভাগের সর্বোচ্চ রেজাল্ট ৩.৮২ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকের জন্যে মনোনিত হলেও সেই শিক্ষার্থীর স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ফলাফলে নেমেছে ধ্বস। শিক্ষক হতে চাওয়া জারমিনের সুযোগ বন্ধ করতেই পরিকল্পনা করে করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।
উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাতের পর শিক্ষার্থী জারমিনা রহমান বলেন, আমি কখনোই বাবার পরিচয় দিয়ে চলিনি। পড়াশোনা করেছি আর স্বপ্ন দেখেছি বাবার মতো আমিও শিক্ষক হবো। বাবা প্রয়াত হবার পরও আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। বিভাগের স্যারকেও আমি বাবার মতোই শ্রদ্ধা করি। আমি এমন ক্ষতিগ্রস্ত হবো তা কখনোই ভাবিনি। আমি খাতার পুনরায় মূল্যায়ন চাই।
শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ জানায়, স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ৯টি কোর্সের মধ্যে অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম একাই নিতেন ৩টি কোর্স। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করাতেন বিভাগেরই অন্য শিক্ষকদের দিয়ে। বাইরের শিক্ষক না দেখতে পারায় নজরুল ইসলাম তার প্রভাব দেখিয়ে নম্বর দেয়ান অন্য শিক্ষকদের দিয়ে। একই অভিযোগ জানিয়েছে অন্যান্য শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরাও।
অর্থনীতি বিভাগের পরীক্ষা সংক্রান্ত নিয়ম নিয়ে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আব্দুল হালিম বলেন, বার্ষিক মৌখিক পরীক্ষায় নিয়ম অনুযায়ী একজন বহিঃস্থ শিক্ষক থাকার বিধান রয়েছে। খাতা মূল্যায়নের জন্যেও বাইরের এক্সপার্টের কাছে প্রেরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে করোনাকালীন সময়ের জন্যে ভিতরের শিক্ষক দিয়েও মূল্যায়ন করার নিয়ম করা হয়েছিলো।
বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলামের।
Leave a Reply