গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে মাস্টারপ্ল্যানে নির্ধারিত দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের স্থানে আইটি পার্কের বিষয়ে জরিপ করে শতভাগ শিক্ষক উক্ত স্থানে আইটি পার্কের বিরোধিতা করেছেন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোঃ কামরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক ড. আবু সালেহ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় একাডেমিক ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ কেন্দ্রে দ্বিতীয় একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ রিজেন্ট বোর্ড এর অনুমতি না নিয়ে, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আইসিটি পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং ইতোমধ্যে কাঁটাতারের বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রেখেছে। দ্বিতীয় একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানে আইসিটি পার্ক নির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই উৎকণ্ঠা বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষক সমিতি গত ৩১ মে ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত সমিতির সাধারণ সভায় আইসিটি পার্ক নির্মাণ সম্পর্কিত বিষয়টি নির্দিষ্ট ভাবে আলোচ্য সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে আলোচনা করে।
বিস্তারিত আলোচনা শেষে সভায় সর্বসম্মতভাবে গৃহীত ৮ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের জন্য নির্ধারিত স্থানে আইসিটি পার্ক নির্মাণের প্রশাসনিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের জন্য নির্ধারিত স্থানে আইসিটি পার্ক নির্মাণের ক্ষেত্রে তীব্র আপত্তি জানানো হয়। কেননা মাত্র ৫৫ একরের স্বল্প আয়তনের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে এরকম একটি বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য ও নান্দনিকতা বিনষ্ট হবে, একাডেমিক পরিবেশ চরমভাবে ব্যাহত হবে, ক্যাম্পাসের বাইরের লোকজনের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কলহ বৃদ্ধি পাবে যা একটি দ্বান্দ্বিক অবস্থা তৈরি করবে এবং সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সাথে স্থানীয় অধিবাসীদের সম্প্রীতি ও সম্পর্কে ভারসাম্য নষ্ট করবে। উক্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষকবৃন্দ অভিমত প্রকাশ করেন যে, মাষ্টার প্ল্যান অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য ও নান্দনিকতা বজায় রেখে দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের জন্য নির্ধারিত স্থানের পরিবর্তে অন্য কোন স্থানে পরিকল্পিতভাবে আইসিটি পার্ক নির্মাণ করা যেতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে আইসিটি পার্ক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে উপকৃত হতে পারে সেই বিষয়গুলো সুস্পষ্ট ভাবে লিখিত থাকতে হবে। এখানে আরো উল্লেখযোগ্য যে, শিক্ষকবৃন্দের মাঝে আইসিটি পার্ক নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়, যেখানে জরিপে অংশগ্রহণকারী শতভাগ শিক্ষক দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের জন্য নির্ধারিত স্থানে আইসিটি পার্ক নির্মাণে প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপ এর বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানায়।
এ সংক্রান্ত সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনার জন্য ১৩ই আগস্ট ২০২২ শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির একটা জরুরী সভা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গত ৩১ মে ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভার ৮ নং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের জন্য নির্ধারিত স্থানে আইসিটি পার্ক নির্মাণের প্রশাসনিক উদ্যোগের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতির তীব্র আপত্তি বহাল রাখা হয়। একই সাথে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য অক্ষুণ্ণ রেখে ক্যাম্পাসের অন্য কোন উপযুক্ত স্থানে আইসিটি পার্কটি নির্মাণের দাবি জানায়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, শিক্ষকদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
Leave a Reply