কুষ্টিয়ায় জ্ঞাত আয় বহির্ভুত প্রায় তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব রক্ষক আব্দুল কুদ্দুস (৬১) (বর্তমান অবসরে) এবং তার স্ত্রী আছিয়া খাতুনের (৫৩) বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক কুষ্টিয়া।
বৃহষ্পতিবার বিকেল ৪টায় কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক অরূপ কুমার গোস্বামীর আদালতে শুনানী শেষে মামলাটি রেকর্ডভুক্ত হয়। সজেকা মামলা নং ৩ ও ৪ তারিখ ১৯/১১/২০২০।
দুর্ণীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার উপ-সহকারী পরিচালক মো: নাছরুল্লাহ হোসাইন বাদি হয়ে করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে একই কার্যালয় কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব রক্ষক আব্দুল কুদ্দুস কর্মরত ছিলেন। এসময় সরকারী কাজের দায়িত্ব পালনকালে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। দুককের তদন্তকালে সম্পদের বিবরণ চেয়ে নোটিশ দেয়া হলে তিনি দুদক কার্যালয়ে দাখিলকৃত মোট সম্পদের বিবরণের সাথে বিদ্যমান স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয় বহির্ভুত বলে দুদকের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে; যার কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি তিনি। একই ভাবে তার স্ত্রী আছিয়া খাতুনকেও সম্পদের বিবরণ চেয়ে নোটিশ দেয়া হলে তিনি দুদক কার্যালয়ে তার সম্পদের বিবরণ দাখিল করেন। আছিয়া খাতুনের দাখিলকৃত সম্পদের বিবরণ সরেজমিন দুদকের তদন্তকালে গড়মিল ধরা পড়ে।
সেখানেও প্রায় দেড়কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদের হদিস পায় দুদক। বিষয়টি যাচায়কালে এই সম্পদের কোন যৌক্তিক সদুত্তোর দিতে পারেন নি আছিয়া খাতুন। যা দুদকের কাছে জ্ঞাত আয় বহির্ভুত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সেকারণে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সাবেক হিসাব রক্ষক কুষ্টিয়া শহরের ২/২, কোর্টপাড়া শহীদ আব্দুল হামিদ লেনের বাসিন্দা মৃত: আতিয়ার রহমানের ছেলে আব্দুল কুদ্দুস এবং তার স্ত্রী আছিয়া খাতুন দুককের কাছে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪ এর দ:বি: ২৬(২), ২৭(১) এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২এর ৪(২) ও৪(৩)ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এছাড়া কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসে কর্মরত অবস্থায় পরষ্পর যোগসাজসে প্রতারণামূলক জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মৃত এক ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে দলিল দাতা করে জমি রেজিষ্ট্রি করার অভিযোগ তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় সাব-রেজিষ্ট্রার শরিয়ত হোসেন(৬১)সহ ৪জনের বিরুদ্ধে দ:বি: ৪০২/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ও ১০৯ধারায় মামল করেছে দুদক কুষ্টিয়া।
অভিযুক্ত আসামীগণ হলেন- দৌলতপুর উপজেলার(অবসরপ্রাপ্ত) সাব-রেজিষ্ট্রিী অফিসের সাব-রেজিষ্ট্রার কুষ্টিয়া শহরের ১১/৩, দাদাপুর রোড থানাপাড়ার বাসিন্দা মৃত: বাল্লক আলী মন্ডলের ছেলে শরিয়ত হোসেন(৬১), উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের বদর উদ্দিনের স্ত্রী বাছি খাতুন(৪২), উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসের দলিল লেখক নারায়ানপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত হাবিল উদ্দিনের ছেলে বাহাউদ্দিন(৪৮) এবং শেরপুর গ্রামের বাসিন্দা বিল্লাল হোসেনের ছেলে লোকমান হোসেন(৩৯)।
দুর্ণীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার উপ-সহকারী পরিচালক মো: নাছরুল্লাহ হোসাইন বাদি হয়ে করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসে রেজিষ্টিকৃত দলিল নং ৫২০৪/১৬ তে মৃত: সুফিয়া খাতুন গেনিকে জীবিত দাতা দেখিয়ে দলিল সম্পাদনের অভিযোগ দুদকের তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা মেলে। দুদকের তদন্তকালে মৃত্যু সনদ পরীক্ষা করে দেখা যায়, ১৯৯৬ সালের ১৬ডিসেম্বর মৃত্যু বরণ করা সুফিয়া খাতুনকে জীবিত দলিল দাতা দেখিয়ে ২০০১৬ সালের ১৯জুলাই অভিযুক্ত দলিলটি সম্পাদিত হয়েছে। এরফলে সাব-রেজিষ্ট্র্রা, দলিল দাতা ও গ্রহীতাগণ পরস্পর যোগসাজসে প্রতারণামূল জালজালিয়াতির মাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলক অপরাধ সংগঠন করেছেন।
Leave a Reply