চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জের আওতাধীন হারবাং বিট এলাকায় প্রতিদিন নিত্যনতুন পদ্ধতিতে বনের জমি জবর দখল হচ্ছে। কোথাও কোথাও বনভূমি কেটে সমতল করে পাকা দালান থেকে শুরু করে বহুতল শপিংমল, পোলট্রি ফার্মসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করে বনভূমির প্রায় সিংহ ভাগ জায়গা এখন দখলবাজদের দখলে । সংরক্ষিত বনভূমির এসব জায়গা দখলে নিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জ ও হারবাং বিটের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোটা অংকের উৎকোচ দিতে হয় বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। আর এ উৎকোচ গ্রহণ করার ফলশ্রুতিতে দিন রাত প্রকাশ্যে পরিবেশ ও বনজ সম্পদ বিধ্বংসী এ অপকর্ম চলতে থাকলেও নির্বিকার রয়েছেন সংশ্লিষ্ট বনবিভাগের এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর বনকর্তাদের এসব অনিয়মের বিষয়ে সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করলে, চোখ ধাঁধানো নিয়মে বনভূমি দখলবাজদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েই শেষ করেন তাদের কর্মযজ্ঞ।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, হারবাং বাস স্টেশন এলাকায় হারবাং ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ মিরানুল ইসলাম এর নেতৃত্বে বনভূমির অন্তত শতকোটি টাকা মূল্যের জায়গা দখল করে নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবনসহ ৩টি স্থাপনা। যার মধ্যে রয়েছে ১টি বহুতল শপিংমল ২টি ফ্লাট বাসা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বনভূমি দখল করে এসব স্থাপনা নির্মাণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরেজমিন এসে বাঁধা প্রদান করলেও পরবর্তীতে রহস্যজনক কারণে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন কর্তা ব্যক্তিরা। পরে কতিপয় এ আওয়ামীলীগ নেতা বরাবর কয়েকটি নোটিশ দিয়েই তাদের কর্মযজ্ঞ শেষ করেন। তবে, বনবিভাগের রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তার এসব নোটিশ প্রেরণকে এক প্রকার নাটকীয়তা বলে মনে করেন সচেতনমহল। তা না হলে এসব নোটিশ প্রেরণের পরও কীভাবে কতিপয় এ ব্যক্তি বনভূমিতে বহুতল ভবনসহ ৩টি স্থাপনা নির্মাণ করেছেন প্রশ্ন তাদের? অন্যদিকে, এ আওয়ামীলীগ নেতার সহোদর ভাই জাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বেও বনভূমি দখল করে সমানে চালানো হয়েছে পরিবেশ ধ্বংসযজ্ঞের মতো কর্মকান্ড। জাহেদুল ইসলাম নামের এ ব্যক্তিটিও বনের জমি দখল করে তৈরি করেছেন বহুতল শপিংমল। এমনকি জাহেদুল ইসলামের শপিংমল নির্মাণের কর্মকান্ড এখনো রয়েছে চলমান।
বনভূমি দখলপূর্বক বনের জমিতে কীভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন সে বিষয়ে হারবাং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা মিরানুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি ত আপনার জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মান করি নাই। জায়গা বনবিভাগের ব্যবস্থা নিলে তারা নিবে আপনার সমস্যা কি।আপনি যা পারেন লিখেন বলে লাইন কেটে দেন।
এবিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক দেলোয়ার হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, হারবাংয়ে বনবিভাগের জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণের বিষয়টি আমার অজানা। আমি দ্রুত সরেজমিন ঐ জায়গাটি পরিদর্শন করবো। এরপরই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বনকর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বনবিভাগের জমিতে কোন ধরনের ভবন নির্মাণের সুযোগ নেই। আপনি যে তথ্যটি দিয়েছেন তা যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আমরা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো এবং তার নামে আমরা মামলা দিবো। এসময় তিনি প্রতিবেদককে এ তথ্যটি তার ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে দিতে অনুরোধ জানান।
Leave a Reply