শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ অপরাহ্ন
নোটিশ ::
বাংলাদেশ সারাবেলা ডটকমে আপনাদের স্বাগতম। সারাদেশের জেলা,উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে  প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে, আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন - ০১৭৯৭-২৮১৪২৮ নাম্বারে
সংবাদ শিরোনাম ::
রবিতে ইকোন ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত  ডেঙ্গারগ্রাম ডিগ্রি কলেজে অভিভাবক ও সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক উপায়ে শেরপুর জেলা ছাত্র কল্যাণ সংসদ বশেমুরবিপ্রবির নয়া নেতৃত্ব নির্বাচিত রবির অর্থনীতি বিভাগে সেমিনার অনুষ্ঠিত  চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে নোবিপ্রবিতে বিক্ষোভ কয়রায় খাস জমিতে ভবন নির্মাণ, ব্যবস্থা নেয়নি ইউএনও চকরিয়ায় বিএনপি নেতার উপর সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী হামলা; চমেকে প্রেরণ লামায় জায়গা-জমির বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ আহত ৭ স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবিতে রবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন শিক্ষার্থীর আকস্মিক মৃত্যুতে নোবিপ্রবি প্রশাসনের অনুদান সাম্য ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ছাত্রদলের নতুন সাংগঠনিক টিম গঠন চকরিয়ায় বিএনপির ঘরে আওয়ামীগের গোপন সোর্স বশেমুরবিপ্রবি সেইভ ইয়ুথের নেতৃত্বে সজল-সামিরা পরীক্ষা শেষে ঘুরতে গিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী ২ বন্ধু নিহত গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি)’র চকরিয়া উপজেলা কমিটি গঠন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের ফ্রেশার্স ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত দখলের সংবাদ প্রচার করায় সাংবাদিক কে মারধর করলো বিএনপি নেতা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী গ্রন্থাগারিক কর্তৃক শিক্ষার্থী মারধরের অভিযোগ যবিপ্রবি ক্যাম্পাস সবুজায়নে বৃক্ষরোপণ করলো টিম “উন্নত মম শির” সাংবাদিক সংগঠনের অফিস দখলে নিয়ে ব্যক্তিগত অফিস বানালো বিএনপি নেতা হাসান রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের কর্মশালা আয়োজিত সাংবাদিকদের সাথে রবি উপাচার্যের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত সিএসটিই ক্লাবের নেতৃত্বে সাইফ-জাবেদ গণমাধ্যম প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে লিখিত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

চকরিয়ার জমজম হাসপাতালে চিকিৎসার নামে চলছে রমরমা বাণিজ্য

মোঃ কামাল উদ্দিন, কক্সবাজার প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২
  • ৩৭৫ ০০০ বার

একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে চিকিৎসা হলো অন্যতম। একটু সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্যই মানুষের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এ জন্য মানুষ ডাক্তার ও হাসপাতালের স্মরণাপন্ন হয়। কিন্তু আমাদের চকরিয়ার অধিকাংশ ক্লিনিক-হাসপাতালগুলো আজ সাধারণ মানুষের জন্য কসাইখানা ও মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। আর ডাক্তারদের মধ্যে বড় একটি অংশ আজ মানবসেবা ও মানবিকতা ভুলে গিয়ে কসাই ও ডাকাতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এছাড়া চিকিৎসা বিষয়ে পড়াশোনা না করেও অনেকে ডাক্তার সেজে চেম্বার দিয়ে বসে আছেন। মানুষ সুস্থতার জন্য চিকিৎসা নিতে গিয়ে ডাক্তারদের ভূল চিকিৎসায় আরও মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। চকরিয়া উপজেলার আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব ক্লিনিক ও হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সেবার নামে চলছে বাণিজ্য। বর্তমানে চকরিয়ার অধিকাংশ হাসপাতাল-ক্লিনিকের মালিক ও ডাক্তাররা সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার পরিবর্তে উপার্জনকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। বর্তমানে চকরিয়ার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে তিনটি সমস্যা মহামারি আকার ধারণ করছে।
১. ডাক্তার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ও ভুল চিকিৎসায় রোগির মৃত্যু।
২. সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই জীবিতকে মৃত ঘোষণা।
৩. চিকিৎসা নিতে গিয়ে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার নামে রোগিকে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়।
এছাড়াও চকরিয়ার চিকিৎসা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। একটি সূত্রে জানা যায়, চকরিয়ার পৌরশহরে বিভিন্ন হাসপাতালে এসব অপকর্ম কম বেশি চললেও চকরিয়া জমজম হাসপাতাল তার একটু ব্যাতিক্রম। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সেবাপ্রার্থীদের এক প্রকার জিম্মি করেই রাখে। এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসলেই অপ্রয়োজনীয়ভাবে দেওয়া হয় একাধিক শারীরিক পরীক্ষা। এক একটি পরীক্ষার মূল্য নেওয়া হয় ৩শ থেকে ৩হাজার পর্যন্ত। এর বাহিরেও রয়েছে একেকটি ডাক্তার ভিজিট ৫০০-১০০০ পর্যন্ত। চিকিৎসা নিতে আসা কোন সেবাপ্রার্থীকে কে যদি এক ঘন্টার জন্যও হাসপাতালটিতে ভর্তি করে কেবিনে রাখা হয় তাহলে ঐ সেবাপ্রার্থীকে গুনতে পুরো একদিনের কেবিন ভাড়া। যার একদিনের কেবিনের ভাড়া পরিশোধ করতে হয় ১৯০০টাকা। এদিকে, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অসুস্থ অঙ্গের পরিবর্তে সুস্থ অঙ্গ কেটে ফেলা,দাঁত তোলার নামে শিক্ষানবিস ডাক্তাররা হাত পাকাচ্ছেন, ডাক্তারের পরিবর্তে ওয়ার্ড বয়রাই আবার সর্বেসর্বা। জটিল কঠিন অপারেশন করতেও দ্বিধা করছেন না তারা। আবার সুযোগ সুবিধাহীন বেসরকারি এ হাসপাতালটিতে একশ্রেণির ডাক্তার,নার্স, আয়া-কর্মচারীর চরম দুর্ব্যবহারের সামনে রোগিরা থাকছেন বড়ই অসহায়। আর মানবসেবার নাম করে গড়ে উঠা এ প্রাইভেট হাসপাতালটি হাতিয়ে নিচ্ছে নিচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় সেবাপ্রার্থীদের অর্থ। অন্যদিকে প্রতিদিন সংবাদপত্র খুললেই দেখা যায় দেশের কোথাও না কোথাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা ডাক্তারের অবহেলায় ও ভুল চিকিৎসায় রোগি মারা যাওয়ার খবর। সিজার করতে গিয়ে নবজাতকের নাড়ী-ভূড়ি বা অঙ্গ কেটে ফেলার খবর। মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বা ভুল ইনজেকশনের কারণে রোগির মৃত্যুর খবর। তবে তারও ব্যাতিক্রম নয় এ হাসপাতালটি। ভুক্তভোগী একটি সূত্র জানায়, গত ১ই আগষ্ট রাত ৮টার দিকে পহরচাঁদা এলাকার ফয়সাল নামের ২১ বছরের ১ যুবকের প্রচন্ড জ্বর হওয়ায় জমজম হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। দীর্ঘ ৪ ঘন্টা ফয়সালকে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে রেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে চিকিৎসা প্রদান করা হয় এবং রাত ১২ টায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি দেওয়া হয়। প্রথম দিকে ফয়সালের অবস্থার উন্নতি হলেও ডাঃ হুমায়ুন ফয়সালকে একটি ইনজেকশন পুস করলে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এমনকি তার প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং সে প্রচন্ড কাপতে থাকে। এক পর্যায়ে তার অবস্থার চরম অবনতি হলে ডাক্তার ফয়সালকে চট্টগ্রামে রেফার করে দেয়। পরে ফয়সালকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখা যায় ভুল চিকিৎসা ও মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশন পুস করার কারণেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক। এক পর্যায়ে অবস্থার আরও অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে এবং এখনো ফয়সাল হাসপাতালটির আইসিইউতে ভর্তি আছে। তার জীবন খুব বেশি সংকটাপন্ন বলেও জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এছাড়াও চকরিয়া জমজম হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রামে রেফার করার সময় হাসপাতালের যাবতীয় বিল পরিশোধ করে মাত্র ১২শত টাকা কম থাকায় তাৎক্ষণিক দিতে না পারায় ফয়সালের মায়ের কানের দুল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রেখে দিয়েছে বলে জানা যায় এবং ফয়সালের মা ফয়সালকে নিয়ে চট্টগ্রামে অবস্থান করাতে এখনো পর্যন্ত ঐ কানের দুল জোড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আছে বলে জানান। এদিকে এ ঘটনার পর সাংবাদিকরা সরেজমিন গেলে উক্ত ঘটনার সত্যতা ও পাওয়া যায়। এদিকে এ ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকরা চকরিয়া জমজম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম কবিরের কাছে জানতে চাইলে এসব বিষয় অস্বীকার করেন এবং তিনি বলেন আমার ডাক্তার কখনো ভূল চিকিৎসা করতে পারে না এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশন ও পুস করেনি। আর টাকার জন্য কানের দুল তারা জোর করে রাখেনি। টাকা পরিশোধ করতে না পারায় রোগীর মা সেচ্ছায় কানের দুল রেখে গেছে বলে তিনি জানান। ভুল চিকিৎসা ও মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশন পুস করা না হলে রোগীর অবস্থা উন্নতি হওয়া থেকে অবনতি কীভাবে হলো এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। উল্টো তিনি এসব বিষয় দেখার জন্য সিভিল সার্জন আছে বলে জানান। অন্যদিকে, এভাবেই প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে এসে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় কেউ লাশ হয়ে ফিরে আসছেন, কেউ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন ও কেউ অঙ্গ হারাচ্ছেন। আবার একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী তার সন্তানটিকে দশ মাস পেটে অনেক কষ্ট সহ্য করে অপেক্ষায় থাকেন সন্তানের মুখ দেখার জন্য। কিন্তু, হাসপাতালটির কর্তব্যরত কিছু ডাক্তার নামের কসাইদের অবহেলায় ওই মাকে মৃত সন্তানের মুখ দেখতে হয়। আবার কোনো মা সন্তানের মুখ দেখার আগে নিজেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন। এসব ঘটনায় ভোক্তভোগীরা যথাযথ বিচার বা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন এমন সংখ্যাটা খুবই কম। বর্তমানে এ হাসপাতালটির মালিক ও ডাক্তাররা ঠিক পরিবহন মালিক শ্রমিকদের মতোই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিমত সচেতনমহলের। তারা আরও বলেন, যাত্রীরা যেমন গাড়ি চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকে তেমনি এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগিরাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারদের কাছে জিম্মি থাকতে হয়। হাসপাতালটিতে উন্নত সেবাটা এখন শুধু সাইনবোর্ড সর্বস্ব। বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত।
যথাযথ প্রতিকার না পেয়ে সাধারণ মানুষও এখন এ হাসপাতাল ও সেখানে কর্মরত ডাক্তারদের ওপর দিন দিন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। এ হাসপাতালটিতে ভূল চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করার কারণে এর আগেও বেশ কয়েকবার হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চকরিয়ার চিকিৎসা ক্ষেত্রে বড় ধরণের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। চিকিৎসার নামে তারা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে ও হয়রানি করছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের তদন্ত সাপেক্ষে উচিত এখনই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অন্যথায় মানুষের ভেতরে জমে থাকা পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..