পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী ভাড়ানী খালের উপর আয়রন ব্রীজটি দেড় বছর আগে ভেঙ্গে পড়ে। অদ্যবধি ব্রিজটি মেরামত না হওয়ায় স্থানীয় হাবিবুল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহস্রাধীক শিক্ষার্থীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট খেয়া নৌকায় তাদেরকে প্রতিদিন পারাপার হতে হচ্ছে। অথবা বিকল্প পথে ৪ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
স্থানীয়রা জানান লেবুখালীর পায়রা নদী থেকে পটুয়াখালীর লাউকাঠি নদীর সাথে সংযুক্ত ভাড়ানী খালের উপর লেবুখালী হাবিবুল্লা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর সামনে ২০০৯ সালের দিকে তৈরি করা হয় আয়রন ব্রীজ। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও স্থানীয় লোকজন এই ব্রীজ দিয়ে পারাপার হতেন। ২০১৫ সালে পন্যবাহী কার্গোর ধাক্কায় ব্রীজটি একাংশ বিধ্বস্ত হলে কয়েকদিন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা দুর্ভোগে পড়ে ভারানি খালটি পারাপার হতে হয় খেয়া নৌকায়। কয়েক মাসের মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি এটি মেরামত করে দিলে স্থানীয়রা পারাপারের সুযোগ পায়। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বালুভর্তি একটি কার্গোর ধাক্কায় ব্রীজের অর্ধেকটা দুমড়ে মুছরে খালে পড়ে যায়। তখন থেকেই দু’পারের লোকজনের যাতায়াতে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ দেড় বছরেও ব্রীজটি মেরামত না হওয়ায় বিদ্যালয়ের সহস্রাধীক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে খেয়া নৌকায় পারাপার হতে হয়।
লেবুখালী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিকুল ইসলাম জানান, ১৯৬১ সালে স্থাপিত হাবিবুল্লাহ সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ২০১৮ সনে জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়ার মান ভালো হওয়ায় পার্শ্ববর্তী বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল মৌগ্রাম, দুমকি উপজেলার আলগি নলদোয়ানী লেবুখালি সহ কয়েকটি গ্রামের শিক্ষার্থীদেরকে এই খেয়া পারাপার হয়ে বিদ্যালয় যাতায়াত করতে হয়। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে খেয়াপাড়া পার হয়ে আসতে হয় অথবা চার কিলোমিটার ঘুরে পাগলা এলাকায় নির্মিত ব্রীজ পারাপার হয়ে আসতে হয় শিক্ষার্থীদের। ব্রীজটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কমে গেছে বলেও জানান তিনি।
লেবুখালী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, ব্রীজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকেই মেরামতের জন্য এলজিইডিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবদি মেরামত না হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সহ এলাকাবাসীর দুর্ভোগ হচ্ছে। তিনি আরো বলেন এই এলাকায় লেবুখালী ইউনিয়ন ভূমি অফিস পোস্ট অফিস দুটি বাজার সহ অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীসহ আগত লোকজন ব্রীজ না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মরিয়ম তুবা জানান, তিনি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল মৌ গ্রাম থেকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন খেয়া পারাপার ভয় নিয়ে পারাপার হতে হয়।
অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাতী আক্তার পরশ মনি জানান তিনি বদরপুর এলাকা থেকে বিদ্যালয় আসেন। ব্রীজটি বিধ্বস্ত হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার হতে হয়।ব্রীজটি মেরামত করা হলে যাতায়াতে আর দুর্ভোগ পোহাতে হবে না বলে জানান তিনি।
দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিপা জানান ব্রীজটি মেরামতের দাবিতে আমরা মানববন্ধন কর্মসূচি ও পালন করেছিলাম কিন্তু এখন পর্যন্ত তা মেরামত না হয় আমরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন মোল্লা জানান, বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষের উচিত এই ব্রীজটি দ্রুত মেরামত করা।
ভারানি খানের খেয়ার মাঝি শাহীন হাওলাদার জানান প্রতিদিন শিক্ষার্থীসহ দুই হাজার এলাকাবাসী তার খেয়া নৌকায় পারাপার হয়। এদের মধ্যে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পারাপার হতে ভয় পায় এবং ঝড়-বৃষ্টির সময় তারা আরো ভীত হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ লতিফ হোসেন জানান, ভারানী খালে বিধ্বস্ত হওয়া ব্রীজটি সরিয়ে সেখানে একটি নতুন ব্রীজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সেতুটির ডিজাইনের কাজ চলমান আছে এবং দ্রুতই টেন্ডার আহ্বান করে নতুন ব্রীজ নির্মাণ করা হবে।
Leave a Reply