করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। কিন্তু দেশে করোনা সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পাবার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুব শীঘ্রই খুলবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পরেছে। যাদের শিক্ষা জীবনে ফিরে আসার সম্ভবনা নেই। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ফরিদপুর জেলা সংসদের উদ্যোগে গত তিন মাস ধরে ফরিদপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপর একটি জরিপ চালিয়েছেন। সেই জরিপ পর্যালোচনা করে আজ তা প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করেছেন তাদের জেলা সংসদের নামে দপ্তর সম্পাদক সুমন মালাকারের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ।
নিচে তাদের এই পর্যালোচনা প্রতিবেদন টি দেওয়া হলো।
ফরিদপুরে করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষা অঙ্গন নিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন ফরিদপুর জেলা সংসদের পর্যালোচনা প্রতিবেদনঃ
বিশ্ব চিরাচরিত যে শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত ছিল এবং অর্থনৈতিকভাবে পৃথিবী বিগত দশকগুলোতে যে অগ্রগতির ধারায় এগুচ্ছিল, কোভিড-১৯-এর কারণে ব্যাপকভাবে তার নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। দীর্ঘকালের ধারাবাহিকতায় শিক্ষা ব্যবস্থার ধরন ও স্বরূপ বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং ক্রমশ তার আধুনিকায়ন ঘটেছে।
কিন্তু কোভিড-১৯-এর কারণে যে পরিবর্তন ঘটেছে তাতে নতুন প্রজন্মের আগামীর স্বপ্নসৌধ নির্মাণের মূলকেন্দ্র শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। গত বছরের জুলাই পর্যন্ত ১৬০টিরও বেশি দেশের স্কুল বন্ধ ছিল। পৃথিবীর প্রায় ১০০ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশে করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় মোট শিক্ষার্থীর ৯৪ ভাগ কোনো-না-কোনোভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ৯৯ ভাগই নিম্ন বা নিম্নমধ্য আয়ের দেশের শিক্ষার্থী। ফরিদপুর জেলা ও তার ব্যতিক্রম নয়।বর্তমান পৃথিবী এমন এক বিপর্যয়ের শিকার, যার প্রভাব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পড়বে, মানবজাতির অন্তর্গত যে সম্ভাবনা রয়েছে তা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, বিগত দশকগুলোর উন্নতির যে ধারা তা বাধাগ্রস্ত হবে। জেলায় শিক্ষাগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় ব্যাঘাতের কারণে শিশুদের পুষ্টিহীনতা,মানসিক রোগ, বাল্যবিবাহ ও নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সারা দেশে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দীর্ঘ দিন ফরিদপুর জেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফরিদপুর জেলায় মোট সরকারি বেসরকারি ৪৩১ টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান(মাদ্রাসা-কারিগিরি) রয়েছে । জেলায় প্রায় ১০লাখের অধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ শ্রমিক-কৃষক পরিবারের সদস্য। করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাপকভাবে বেকারত্বের হার বেড়েছে। যার ফলে মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ঝরে পরছে এবং পরিবারের হাল ধরতে তারা প্রতিনিয়ত কাজের সন্ধান করছে। ফরিদপুর জেলার ব্যাপক সংখ্যক বিভিন্ন গার্মেন্টস -কারখানায় কাজে নিয়োজিত হয়েছে। অন্যদিকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে জেলায় বাল্যবিবাহ, এর বেশি শিকার হচ্ছে ১৪-১৭ বছরের কিশোরীরা।
এমতো অবস্থায় জেলার সকল শিক্ষার্থীদের করোনা ভ্যাক্সিন, শিক্ষা বৃত্তির ও নিয়মিত কাউন্সিলের নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকে। বাল্যবিবাহ রোধে প্রশাসনের আরো বেশি উদ্যোগী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
বাল্যবিবাহ ছোবলে আঘাত প্রাপ্ত ও সহিংসতা শিকার নারী- কিশোরীদের জন্য সরকার ও তার মাঠপর্যায়ের প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহানুভূতি প্রদর্শন করতে হবে বলে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ফরিদপুর জেলা সংসদ মনে করে।
Leave a Reply