উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও নাটোরের বড়াইগ্রামে কৃষি জমিতে পুকুর খনন থামছে না। এতে শুধু কৃষি জমিই নষ্ট হচ্ছে না, পরিবেশের উপরও বিরুপ প্রভাবের আশংকা রয়েছে। এছাড়া মাটি বহনকারী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত এর অবসান না হলে জলাবদ্ধতাসহ পরিবেশে বিরুপ প্রভাব পড়ারও আশঙ্কা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবী, পুকুর খনন বন্ধে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায়, বড়াইগ্রামের গোপালপুর ইউনিয়নের গোপালপুর খাঁ পাড়া এলাকায় মোস্তাক হোসেন দীর্ঘদিনের পুরনো খাল দখল করে এক্সকেভেটর দিয়ে পুকুর কাটছেন। একই সঙ্গে পাশের তিন ফসলী প্রায় ৫ বিঘা জমিতেও তিনি পুকুর খনন করছেন। একই ইউনিয়নের অর্জুনপুর এলাকার শাহজাহান আলী তার ৫ বিঘা জমিতে পুকুর কাটছেন। এসব পুকুরের মাটি যাচ্ছে পাশের একটি ইটভাটায়। চান্দাই ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে ৬ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। একই ইউনিয়নের আকবর মোড় এলাকায় আলমের ইটভাটার পেছনে মাহতাব উদ্দিনের ১০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। জোনাইল বাগবাচ্চা বিলের প্রায় ১২ বিঘা জমিতে পুকুর কাটছেন লোকমান হোসেন নামে এক ব্যাক্তি। একইভাবে বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের চড়–ইকোল এলাকায় মাটি কাটার ঠিকাদার হায়দার আলী, মানিকপুর গ্রামে রেজাউল করিম, রাজাপুর গ্রামে আব্দুল খালেক এবং উপলশহর কিলিকমোড়ে আব্দুল আজিজ তিন ফসলী জমিতে পুকুর কেটে বাইরে মাটি বিক্রি করছেন। একই ভাবে বড়াইগ্রাম উপজেলা আটঘরিয়া, ভবানীপুর, কামারদহ, মহানন্দগাছাসহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে অবাধে পুকুর খনন। কোথাও এক্সকেভেটর আর কোথাও শ্রমিক দিয়ে পুকুর কেটে এসব মাটি বিক্রি হচ্ছে বড়াইগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন ইট ভাটায়। সেই সাথে পাকা-কঁাচা সড়ক ব্যবহার করছে মাটি বহনকারী ট্রাক্টর। এতে ক্ষতি হচ্ছে রাস্তাঘাট, ঘটছে দুর্ঘটনা, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ট্রাক্টর মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি গাড়ীর মাটি বিক্রি হচ্ছে আটশ’ থেকে এক হাজার টাকায়। সেই সাথে গাড়ীগুলো চালাতে দেখা যায় অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক। যাদের বয়স পনের থেকে বিশের মধ্যে। এদের কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স বা গাড়ি চালানোর কোন বৈধ কাজ কাগজপত্র নেই। এছাড়া অনেকেই ভিটেমাটিতে করা আম, লিচু, কাঁঠাল, বাগান কেটে সাময়িক লাভের আশায় পুকুর খনন করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, কৃষি ফসল বিনষ্ট করে পুকুর খনন করা একটি অপরাধ। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় কৃষি জমিতে খনন বন্ধে পুকুর মালিকসহ গাড়ীর চালককে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও জরিমানা করা হচ্ছে এবং গাড়ীর ব্যাটারী জব্দ করা হয়েছে। কৃষি জমিতে কাউকে পুকুর খনন করতে দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে অভিযান আরো জোরদার করা হবে।
Leave a Reply