মহামারী করোনা; কেমন কাটছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন ‘বাংলাদেশ সারাবেলা’র বরিশাল ব্যুরোর প্রধান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিসবাহুল ইসলাম রিয়াদ।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়াবহ বিস্তার এখন সারা বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশে মরনঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী পাওয়া যায় মার্চ মাসের ৮ তারিখ। দিনদিন বাড়ছে সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। মার্চ মাসের ১৮ তারিখ থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলো বন্ধ হয়ে যায় ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এখন নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। ঘরবন্দি অবস্থায় শিক্ষার্থীদের এই দিনগুলো কেমন কাটছে? জেনে নেয়া যাক কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে।
সাইফুল ইসলাম তপু
সমাজকর্ম বিভাগ (৪র্থ বর্ষ ৭ম সেমিস্টার)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কোয়ারেন্টিন কেমন কাঁটছে এ প্রশ্নের উত্তর হবে এক শব্দে, আলহামদুলিল্লাহ। করোনার এই সময়টায় অনেকেই অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমি সুস্থ এবং ভালো আছি। প্রথমদিকের দিনগুলোতে নিজেকে মানিয়ে নিতে বেশ সমস্যায় পড়েছিলাম। কিন্তু এখন মানিয়ে নিয়েছি। করোনার সময়টাতে সারাক্ষনই ঘরের মধ্যে থাকা হয় বিধায় আমি আমার অনেক অভ্যাস পরিবর্তন করতে পেরেছি। অনেক বিষয়ে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করছি।
বিভিন্ন লেখকের বই পরে বাড়িতে সময় কাটাচ্ছি। করোনার প্রথম দিকে এলাকায় সচেতনতা মুলক কাজ করছি। এলাকায় একটি সংগঠন থেকে অসহায় মানুষদের সাহায্য করেছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাতাড়ু তাই বাড়ির পুকুরে সাতাড় এর অনুশীলন টা করে নিচ্ছি।
এছাড়াও বাড়িতে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করছি।
রাইতাহ্ ইসলাম
লোকপ্রশাসন বিভাগ (২য় বর্ষ)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সত্যি বলতে আমি কখনোই ঘরে বসে থাকার মতো মানুষ ছিলাম না।আমার তো সারাটা দিন কাটতো ক্লাসের পর টুকিটাকিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায়। এমন সব অভ্যেসের আমি কে হঠাৎ বলা হলো বাইরে যাওয়া যাবে না!!
সত্যি বলতে কষ্ট হচ্ছে,প্রতিদিনই ভাবছি কবে সবঠিক হবে ক্যাম্পাসে যাবো।
তবে এই সময়টা তো একেবারেই নষ্ট করা যায়না এই ভেবেই কিছু বই পড়ছি।ক্যারিয়ার সম্পর্কিত বই,বিভিন্ন উপন্যাস,ইমশোনাল ইন্টেলিজেন্স এমন সব বই পড়েই দিন কাটছে।কোর্সেরার মাধ্যমে কিছু কোর্স করেছি, পাবলিক স্পিকিং,ইনফ্লুয়েন্সিং পিউপিল এমন সব বিষয়ে।
অল্প সল্প রান্নাও শিখছি।
কিছু সাকসেসফুল মানুষের লাইভ ভিডিও গুলো দেখছি।
এবং ইচ্ছা আছে আরো কিছু দিনের মধ্যে আরও কিছু নতুন কোর্স করার,নতুন কিছু স্কিল অর্জন করার।
সর্বোপরি আলহামদুলিল্লাহ, যেখানে পৃথিবীর অবস্থা এতোটা খারাপ হওয়ার পরেও আমি ও আমার পরিবারের সবাই এখনো সুস্থ আছি।
মোঃ সাইম শিকদার
ইংরেজি বিভাগ (২য় বর্ষ ৪র্থ সেমিস্টার)
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
কোয়ারেন্টাইন ! যন্ত্রনাদায়ক ! চারদেয়ালে আটকে আছি !। জীবনের প্রতি বিরক্ত হয়ে গেছি। বন্ধুমহল,আড্ডা ভীষন মিস করতেছি । সবার কথা বলতে পারি না,তবে আমি বিশেষ করে ক্যাম্পাস এরিয়াটুকু ভীষন মিস করতেছি । আবার শুকরিয়া আদায় করি যে, বাসায় আছি সুস্থ আছি।
সারাদিন বাসায় বসে থাকি,ছাদে উঠে আকাশ দেখি আর গেম খেলি ! পাবজি,কল অব ডিউটি থেকে শুরু করে সব গেম ইমস্টল দেওয়া হয়ে গেছে কিন্তু কিছুতেই মন বসাতে পারি নি ।
আর পড়ালেখা,সে তো মগডালে বাসা বেধেছে,ছুঁতেই পারি না ! তারপরেও আমি বলবো যে,পরিবারের সাথে আছি ভালো আছি ।
আর হ্যা সবার উদ্দেশ্যে, ঘরে থাকুন,সুস্থ থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন !
সুমাইয়া আফনান নাহিন
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ (৩য় বর্ষ ৫ম সেমিস্টার)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বর্তমানে কোভিড ১৯ এর কারণে আমরা সবাই এখন ঘরবন্দী,থমকে গেছে পুরো বিশ্ব।সময়টা আমাদের সবার জন্যই খুব খারাপ।কিন্তু আমি চেষ্টা করছি এই খারাপের ভেতর থেকেই যতটুকু ভাল বের করে নেয়া সম্ভব তা করতে।
আমার কাছে বর্তমান পরিস্থিতর সব থেকে ভাল দিক হলো একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে অন্য কিছু পড়ার জন্য অনেকটা সময় পেয়েছি,কিছু বই অনেকদিন থেকেই পড়ার কথা চিন্তা করছিলাম কিন্তু সময় হচ্ছিল না,এই বন্ধে তাই হুমায়ুন আজাদ এবং আহমদ ছফার বেশ কিছু বই পড়ে ফেলেছি, কিছু ভ্রমণবিষয়ক বই এবং থ্রিলার ও পড়া হয়েছে।
এছাড়া এই ছুটিতে বেশ কিছু রান্না শিখেছি এবং পরিবারের সবাইকে সেগুলো রান্না করেও খাইয়েছি।বর্তমান পরিস্থিতির আরেকটা ভাল দিক হলো পরিবারের সাথে অনেকটা সময় কাটাতে পারছি এবং এতে করে পারিবারিক বন্ধন যেমন দৃঢ় হচ্ছে এছাড়া পারস্পারিক বোঝাপড়াটাও বাড়ছে।নিয়মিত প্রার্থনা করছি,যেহেতু রোযার মাস এবং বাসায় আছি তারাবীর নামায টাও নিয়মিত পড়া হচ্ছে।
কিন্তু এতকিছুর পরও আমি চাই এই অন্ধকার সময় কেটে যাক এবং পৃথিবী আবার আগের মত সুস্থ, সুন্দর হয়ে যাক।
Leave a Reply