ইতালির নাগরিক মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু শিক্ষানুরাগী কবি সাহিত্যিক অনুবাদক ফাদার মারিনো রিগন এস এক্র এর ৯৭ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ (৫ ফেব্রুয়ারি) শুক্রবার সকালে ফাদার রিগন শিক্ষা ফাউন্ডেশন,সেন্ট পলশ উচ্চ বিদ্যালয়,সম্মিলিত সাংষ্কৃতিক জোট সেবা সংস্থা এর আয়োজনে মোংলার সেন্ট পলস হলরুমে স্মারণানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।মোংলা সরকারি কলেজের প্রভাষক মনোজ কান্তি বিশ্বাস এর সঞ্চালনায় স্মরণানুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফাদার রিগন শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’র সভাপতি সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কমলেশ মজুমদার। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন শিক্ষাবিদ সুনীল কুমার বিশ্বাস, সহকারি কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার রাজবংশী, সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনীন্দ্র নাথ হালদার ও সেবা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মিনা হালদার। স্মরণানুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক সাংবাদিক মোঃ নূর আলম শেখ। স্মরণানুষ্ঠানে বক্তারা ফাদার মারিনো রিগন এস এক্র এর কর্মময় জীবন তুলে ধরেন।স্মরণানুষ্ঠানের আগে মারিনো রিগনের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করে উপজেলা প্রশাসন, ফাদার রিগন শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয় , বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ’সেবা’সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। উল্লেখ্য,১৯২৫ সালের ৫ ই ফেব্রুয়ারি ইতালির ভেনেতো প্রদেশের ভিসেঞ্জা জেলার ভিল্লাভেরলা গ্রামে জন্মগ্রহনকরেন ফাদার মারিনো রিগন এস এক্র। ইতালির নাগরিক হয়েও বাংলাদেশকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবেসেছিলেন ফাদার মারিনো রিগন । ১৯৫৩ সালে তিনি বাংলাদেশে আসেন। এর পর মোংলায় একটি উচ্চ বিদ্যালয় আর একটি চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন। এর পর থেকে মোংলায় স্থায়ী বসবাস।এই মহান মানুষটি শিক্ষা বিস্তারে অসামান্য অবদান রেখেছেন। ৬১ বছর ধরে বাংলাদেশে বসবাস রত অবস্থায় তিনি দক্ষিণাঞ্চলে তাঁর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও হাজার হাজার হত দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে। সাহিত্যিক অনুবাদক ফাদার মারিনো রিগন ইতালিয়ান ভাষায় রবীদ্রনাথ ঠাকুরর গীতাঞ্জলিসহ ৪০টি কাব্যগ্রন্থ, লালন সাঁইয়ের সাড়ে তিনশো গান, জসিম উদ্দিনর নক্সীকাঁথার মাঠ, সাজন বাদিয়ার ঘাট ছাড়াও এদেশের গুরুত্বপূর্ণ কবিদের অসংখ্য কবিতা অনুবাদ করছেন।ফাদার মারিনো রিগন মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। যুদ্ধকালীন সময় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা, শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধা ও নিরস্ত্র বাঙালিদের তিনি সহায়তা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা এ অবাদন রাখার জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেছিল। সৃজনশীল, শিক্ষামূলক ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০০৮ সালে ফাদার রিগনকে প্রদান করেছিল বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব।বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় কারনে ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর মাত্র ৯২ বছর বয়সে ইতালিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এরপর ফাদার রিগনের ইচ্ছা অনুযায়ি মৃত্যুর এক বছর পর ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর তাঁর মরদেহ দেশে এনে মংলার শেলাবুনিয়া সেন্ট পলস গির্জার পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
Leave a Reply