কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বড় চলুন্ডা গ্রামে স্ত্রীকে রাস্তায় ফেলে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর নির্যাতনকারী স্বামী নাজমুল হাসান (২৫) কে গ্রেফতার করেছে লালমাই থানা পুলিশ। ২০ এপ্রিল (মঙ্গলবার) মামলার তদন্তকারী অফিসার পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম ও থানার সেকেন্ড অফিসার জীবন রায় চৌধুরী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে যৌথ অভিযান করে পালানোর সময় নাজমুল কে নিজ গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে। এর আগে নির্যাতনের ঘটনায় মঙ্গলবার বিকালে স্বামী নাজমুল হাসান, শ্বাশুড়ী শামীমা বেগম, ভাশুর নজরুল ইসলাম ও শ্বশুর আবুল খায়েরের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের বিরুদ্ধে লালমাই থানায় মামলা দায়ের করেন নির্যাতিতা স্ত্রী মরিয়ম আক্তার আইরিন।
জানা যায়, লালমাই উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়নের বড় চলুন্ডা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আবুল খায়েরের ছেলে নাজমুল হাসান দু’বছর আগে একই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের গৈয়ারভাঙ্গা বাজারস্থ খলিল মেডিকেল হলে সেলসম্যান হিসেবে চাকরি করতো। সেই সুযোগে ঔষধ ক্রয় করতে গিয়ে নাজমুলের সাথে পরিচয় ও প্রেম সম্পর্ক গড়ে উঠে বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রেমনল গ্রামের কৃষক মমতাজ উদ্দিনের মেয়ে মরিয়ম আক্তার আইরিনের (১৯)। এক বছর ধরে চলা সেই সম্পর্ক অনেকদূর এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে পরিবারের সম্মতি না পাওয়ার অজুহাতে নাজমুল আইরিনকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। এরই মধ্যে গত বছরের ১১ অক্টোবর সকালে বিয়ের দাবীতে নাজমুলের বাড়ীতে অনশন শুরু করে আইরিন। সারাদিন অনশনের পর ওই দিন রাতে স্থানীয় গ্রাম সর্দার ও গণ্যমাণ্যদের মধ্যস্থতায় নাজমুলের বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা আইরিন কে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ১৪ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক ৩লক্ষ টাকা কাবিনে আইরিনদের বাড়ীতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের কিছুদিন পরই স্বামী নাজমুলসহ তার পরিবারের সদস্যরা আইরিন কে ৩লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টি শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা আইরিন কে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। যৌতুকের টাকা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়ে আইরিন বাবার বাড়ীতে বসবাস শুরু করে। গত ৭ এপ্রিল সকাল অনুমান ৯টায় স্বামীর সাথে দেখা করতে শ্বশুর বাড়ীতে গেলে আইরিন কে যৌতুকের দাবীতে পুনরায় শারীরিক নির্যাতন করে শ্বশুরবাড়ীর লোকজন। একপর্যায়ে স্বামী নাজমুল আইরিন কে ঘরে থেকে বের করে টেনে-হিঁছড়ে রাস্তায় নিয়ে আঁছড়ে দেয়। ওই নির্যাতনের ১৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয় এবং নিন্দার ঝড় উঠে।
এ ঘটনায় মরিয়ম আক্তার আইরিন সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, মামলার ৬/৭ ঘন্টার মধ্যেই পুলিশ ১নং আসামীকে গ্রেফতার করেছে। তবে ঘটনার পরপরই আমার থানায় গিয়ে মামলা করা উচিত ছিল। তাহলে আরো আগেই নাজমুল গ্রেফতার হতো।
লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, নির্যাতনের ঘটনাটি সোস্যাল মিডিয়ায় দেখেই নির্যাতিতা নারীকে সনাক্ত করি এবং তার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধন ২০০৩) এর ১১ (গ)/৩০ ধারায় মামলা রেকর্ড করি। প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে অভিযান চালিয়ে নির্যাতনকারী নাজমুল কে গ্রেফতার করি।
Leave a Reply