স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে, সেবা নেই। চকরিয়ার সরকারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন বাণিজ্যিক হাসপাতালগুলোর এজেন্ট হিসেবে রুপ নিয়েছে। একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই সোঁজা রেফার করা হয় চকরিয়া ম্যাক্স হাসপাতাল বা অন্যান্য বাণিজ্যিক হাসপাতালগুলোতে। চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে ডাক্তাররা আছে তারা কী ম্যাক্স হাসপাতালের ডাক্তারগুলোর চাইতে কোন অংশে কম অভিজ্ঞ এমন প্রশ্ন জনসাধারণের মনে? নাকি কমিশনের আশায় বাণিজ্যিক মনোভাব থেকে এরকম করা হয় এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে পেতে সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন প্রতিবেদক। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন অনিয়ম দূর্নীতির আঁতুড় ঘরে পরিণত হয়েছে। উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি ১ম শ্রেণীর পৌরসভার নাগরিকদের চিকিৎসা সেবা গ্রহণের একমাত্র সরকারি হাসপাতাল এটি। কিন্তু, এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের পদে পদে হয়রানি করা হচ্ছে। সেবাপ্রার্থীদের সাথে করা হচ্ছে জঘন্য নোংরা আচরণ। এমনকি আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে কয়েকজন রোগীর স্বজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বয়ং জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার নাম মাত্র চিকিৎসা সেবা দিয়ে রোগীর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন জানিয়ে চকরিয়া ম্যাক্স হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার জন্য বলে দেন। এদিকে, প্রতিবেদক এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়ার পর পুরোদমে তদন্তে নামে এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে ইসমাইল হোসেন ধলু নামক এক শ্রমিক নেতা প্রতিবেদককে জানান, সম্প্রতি চকরিয়া পৌরসভা ৩নং ওয়ার্ডে একটি মারামারির ঘটনায় শাওন নামের এক যুবক ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়। পরে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ম্যাক্স হাসপাতালে গিয়ে অপারেশন করাতে বলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। তাদের কথা মতো ম্যাক্স হাসপাতালে গিয়ে ডাঃ জন বাহাদুর ত্রিপুরার মাধ্যমে অপারেশন দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে ক্ষতস্থানে পচন ধরে। বর্তমানে সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাইভেট সেবা প্রতিষ্টান ম্যাক্স হাসপাতালের এজেন্ট হিসেবেই কাজ করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের এমন কর্মকান্ডের নিন্দা জানাচ্ছি। অপরদিকে চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির বলেন, গত কিছুদিন আগে তার বউয়ের আপন বড় ভাই মোঃ ফোরকান এর এপেন্ডিসাইটিসের কারণে তীব্র ব্যথা উঠলে দ্রুত চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর কোন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই একের পর এক ইনজেকশন পুষ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটলে কোন প্রকার রেফার সার্টিফিকেট ছাড়াই কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ফোরকান ভাইকে কক্সবাজার নেওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেন। তার এ মৃত্যুর পিছনে একমাত্র দায়ী চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ৩ জন ডাক্তার। তারা হলেন, ডা. শাওন সিনহা, ডা. আবু জাফর সাদেক ও ডা. সাকিব আল রাধিকা। তাদের তত্ত্বাবধানেই প্রয়াত ফোরকান ভাইয়ের চিকিৎসা চলেছিলো। কিন্তু, তাদের চিকিৎসায় অবহেলা ও রোগ না বুঝে ভূল চিকিৎসার কারণে তিনি অকালে মারা গেছেন। এদিকে, ভুক্তভোগীদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শোভন দত্তের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং প্রতিবেদককে সরাসরি অফিসে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান এবং তিনি অপারেশন থিয়েটারে আছেন বলে ফোন কেটে দেন। অপরদিকে, কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান এর কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কিছু যদি ঘটে থাকে তাহলে ভূক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে যারা ভূক্তভোগী তাদের থেকে কক্সবাজার সিভিল সার্জন বরাবর আগে লিখিত অভিযোগ দিতে হবে।
Leave a Reply