‘অভিজ্ঞতা’ শব্দটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে ‘অভিজ্ঞতা’ শব্দটি কেমন যেন দুর্বিসহ মনে হচ্ছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় বুদ্ধিজীবী সমাজ এই ‘অভিজ্ঞতা’ শব্দটিকে না জানি সুচিন্তিতভাবে অপব্যবহার করেছেন। এই ধরুন, একজনের প্লেন চালানোর অভিজ্ঞতা আছে, আবার কারো প্লেন কিভাবে চালাতে হয় সে বিষয়ে বিজ্ঞান বই পড়ার পরীক্ষার অভিজ্ঞতা আছে। তাহলে কোন অভিজ্ঞতা কে গ্রহণ করা হবে! এবং কতটুকু গ্রহণ করা হবে! অনেকের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো অভিজ্ঞতা আছে। বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ব অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী প্রাইভেট এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কে কখনোই আলাদা করা হয়নি। অথচ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অভিজ্ঞতাকে কেটে ফেলে দিয়ে কোথাও অর্ধেক কোথাও ৪০ ভাগ কোথাও জিরো করে রেখেছেন। এর পেছনের কারণ খুঁজতে গেলে খুঁজে পাওয়া যায় ব্যক্তি স্বার্থ অথবা কোন গুষ্টি স্বার্থের অপরিপক্ক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। যেমন ধরুন পূর্বের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা যদি যোগ করা হয় তাহলে কোন একজন অথবা একাধিক ব্যক্তিবর্গ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইবার, তিনবার অথবা আজীবন চেয়ারম্যান ডিন অথবা ড্যাশ ড্যাশ হতে পারবো না। সেজন্য কাগজের টুকরার মধ্যে কিছু ‘নীতিমালা’ লেখে রাখা প্রয়োজন তাই সুপরিকল্পিতভাবে লিখে রেখেছেন। আবার সেই লিখিত নীতিমালা অনুযায়ীও যদি খুঁজে বের করা যায় যে অবৈধভাবে আমার সেই চেয়ারে থাকতে হবে সেজন্য আবার নীতিমালার মধ্যেও অপারেশন চালানো হয়। যখন প্রয়োজন তখন ‘অভিজ্ঞতা’ সম্পন্ন এই চিকিৎসকগণ! যারা ইতিপূর্বে ঐ নীতিমালা লিখেছেন সেটার মধ্যেও অপারেশন চালিয়ে থাকেন। সেটা আবার আইসিইউতে অর্থাৎ কেউ জানে না কারো ঢুকার অধিকার নাই এমনই একটি জায়গায়। অপারেশন হওয়ার পরে জানা যায়। আবার নীতিমালার মধ্যে কিছু বিষয় শিক্ষকদের বড় একটি অংশের পক্ষে চলে যাচ্ছে তখন ঐ কু…. সম্পন্ন লোকের আবার হুটহাট করে নীতিমালা পরিবর্তন করে ফেলেন। ধিক্কার জানাই এসব দূরভীসন্ধিযুক্তকারীদের! নিজের স্বার্থ সিদ্ধির কারণে অন্যদের উপর অত্যাচার কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। এই ধরুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে যারা লেকচার হিসেবে জয়েন করেছিলেন তাদের মধ্যে তিনজন লেকচারার এবং এসোসিয়েট প্রফেসর থেকে প্রফেসর হওয়ার কথা দুই বা ততোধিক সম্মানিত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে কি অত্যাচারীনা করা হচ্ছে! এই কাজ যারা করেন তারা এতটাই “ইখলাসের” সাথে সাথে অর্থাৎ গোপনীয়তার সাথে করেন যে কখনো যদি প্রকাশ পেয়ে যায় তাহলে একে অপরের উপর দোষ চাপিয়ে পার হয়ে যান। তার মানে আমি করেছি এই কথা বলার সৎ সাহস আর থাকেনা । এতেই বোঝা যায় সঙ্ঘবদ্ধ একটি চক্র! বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ পদাধিকারধারী এই “সর্বোৎকৃষ্ট”, নিকৃষ্ট প্রাণী গুলো এতটাই নিকৃষ্ট যে যখন বিপদে পড়ে পরে তখন আবার বলে আমি এটা করিনি। ছি ছি! আমি জেনে বুঝে ‘সর্বনিকৃষ্ট’ শব্দটি ব্যবহার করেনি কেননা কোরআনে একটি আয়াতে যারা দুষ্ট লোক তাদের ক্ষেত্রে “সর্বোৎকৃষ্ট” নিকৃষ্ট শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ এই যে শব্দগুলো যখন তারা পড়বে অথবা শুনবে তখন তাদের অন্তরে অন্তত কিছুটা দাগ কাটবে! যদি না কাটে না ধরে না বুঝে তাহলে তারা তো মানুষের কাতারে থাকে না! যদিও তারা মানুষ হয়। কোরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন এই ধরনের মানুষ হচ্ছে চতুষ্পদ জানোয়ার, এমনকি এর চেয়ে নিকৃষ্ট। কেননা জানোয়ার অন্যায় করলে ঐ অন্যায়ের কোন হিসাব হবে না। মানুষ যদি অন্য মানুষের অধিকার নষ্ট করে তাহলে অবশ্যই তাকে একদিন না একদিন হিসাবের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কিছু পানিশমেন্ট নেচারালি হয়ে যায়। যার বহিঃপ্রকাশ কখনো কখনো সাথে সাথে হয় অথবা কিছুদিন পরে হয়, নাহয় ভবিষ্যৎ তো পড়েই আছে। আসুন সবাই মিলে ঐ সমস্ত মানুষদেরকে ধিক্কার জানাই এবং শিক্ষকদের সর্বোপরি স্বার্থকে উদ্ধারের জন্য সকল শিক্ষক একসাথে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। ধরুন একজন তার প্রফেশনাল বিষয়ে কোন এক জায়গায় চাকরি করে এসেছেন অর্থাৎ তিনি সাইকেল চালাতে পারেন বা প্লেন চালাতে পারেন অথবা গাড়ি চালাতে পারেন। তার অভিজ্ঞতা কেন কাউন্ট করা হবে না! আরেকজন শুধু ঐ বিষয়ে পড়ে এসেছেন অথবা পড়াচ্ছেন কিন্তু তার কোন প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা নাই তাহার অভিজ্ঞতাকে কেন কাউন্ট করা হচ্ছে। আসুন এই “অভিজ্ঞতা” শব্দকে আমরা এভাবে ফুটবলের মত ব্যবহার না করি অর্থাৎ যখন আমার প্রয়োজন তখন ঠিক আছে যখন অন্যের প্রয়োজন তখন লাথি মেরে সরিয়ে দেয়। আমাদের যারা গভীর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নীতি নির্ধারক আছেন তাদেরকে আল্লাহ তা’আলা এই ‘অভিজ্ঞতা’ শব্দটি কে একই রকম ভাবে এবং সার্বজনীনভাবে ব্যবহার করার তৌফিক দান করুন। বিশেষ করে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সমস্ত শিক্ষক মন্ডলী ডিউটেড প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং ভবিষ্যতে হবেন তাদের ক্ষেত্রে পুনরায় নতুন ভাবে রিজেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে ডিউ ডেট কার্যকর করে তাদের অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করা হোক।
লেখকঃ
আবুল বাশার রিপন খলিফা
সহযোগী অধ্যাপক ফার্মেসি বিভাগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জ-৮১০০
Leave a Reply