কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের উত্তর হারবাং উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের জোর করে মানববন্ধনে দাঁড় করানোর অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি হারবাং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের করমুহুরীপাড়া এলাকায় চুরির অপবাদ দিয়ে ২ যুবককে জুতার মালা পরিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় উত্তর হারবাং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল আহমেদকে প্রধান অভিযুক্ত করে মোট ৭জনের নামে একটি মামলা করেন দুই যুবকের ভুক্তভোগী পরিবার। এ মামলা থেকে রেহাই পেতে উত্তর হারবাং উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের নয়াবাজার এলাকায় বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার প্রতিবাদে ও অব্যাহতি প্রদানের দাবি’ ব্যানারে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ মানববন্ধন হয়।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল আহমেদ সহ মামলার অন্যান্য আসামীদের অপরাধ আড়াল করতে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করে জোরপূর্বক মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির দুজন শিক্ষার্থী জানায়, আজকের মানববন্ধনের বিষয়ে তারা কেউ কিছু জানত না। দ্বিতীয় ক্লাস শেষে হঠাৎ প্রধান শিক্ষক বেলাল আহমেদসহ কয়েকজন শিক্ষক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে এসে মানববন্ধনে অংশ নিতে যেতে বলেন। পরে ক্লাস রেখে সবাই মানববন্ধনে যায়। মানববন্ধন শেষে আর ক্লাস হয়নি। ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নবম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলেন, শুনেছি আমাদের এলাকার ২জন ছেলেকে চুরির দোষ দিয়ে জুতার মালা পড়ানো হয়েছিলো। সে ঘটনায় জাহেদ নামের একজনের স্ত্রী আমাদের প্রধান শিক্ষক বেলাল আহমেদসহ বেশ কয়েকজনের নামে মামলা করেছেন। এবিষয়টিকে কেন্দ্র করে সকাল ১১টার দিকে স্যারেরা ক্লাসে এসে বলেছেন, এ বিষয়ে আমাদের প্রতিবাদ করা দরকার। তাই সবাইকে মানববন্ধনে অংশ নিতে হবে। স্যারদের নির্দেশে আমরা মানববন্ধনে এসেছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, সামনে আমার মেয়ের পরীক্ষা। এ অবস্থায় প্রতিটি ক্লাস গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজেদের স্বার্থে ক্লাস বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করালো। এরপর আবার বাকি ক্লাস না নিয়ে ছুটিও দিয়ে দিল। এটা করা উচিত হয়নি। প্রশাসনের এসব বিষয় দেখা উচিত।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল আহমেদসহ মামলার অন্যান্য আসামীদের অপরাধ ঢাকতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ রেখে তাদের দিয়ে জোরপূর্বক মানববন্ধন করিয়েছেন। যা মোটেও উচিত নয়।
এ বিষয়ে জানতে চকরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। যদি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, তাহলে তাঁরা আইনীভাবে মোকাবেলা করতে পারতেন। তবে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ করে মানববন্ধনের আয়োজন করা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত। স্কুলটি এমপিও ভুক্ত নয়। একটি কেজি স্কুলের মতো। এরপরও এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।
Leave a Reply