“অবিনশ্বর ধরিত্রীতে; স্রষ্টার নীলার বহিঃপ্রকাশ জীব,
মানুষের মনুষ্যত্বহীনতায়; আত্মাকে দন্ডিত দর্শনহীন শিব।”
-সুমন দাস
সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি জীবের মধ্যে আত্মারূপে অবস্থান করেন। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষ অন্যান্য প্রাণীদের তুলনায় বেশি জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেকের অধিকারী। মানুষের আসল পরিচয় তাঁর মনুষ্যত্বে। এই মনুষ্যত্বই মানুষের হিরণ্ময় শিখা, যা মানুষের মানবতা, বিবেক ও চেতনাবোধকে জাগ্রত করে। মানুষ যদি অন্য প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসা ও মানবতা না দেখায়, তাহলে কখনও স্রষ্টার সদয় লাভ করতে পারবে না। তাইতো, স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ‘জীবের সেবাই ঈশ্বরের সেবা।’ সততা, মততা, প্রেম, ভালোবাসা না থাকলে প্রকৃতি যেন মলিনতায় নুয়ে পড়ে। ভালোবাসা, মানবতা দিয়ে পবিত্রতার ফুল ফোটানো যায়। মনুষ্যত্বের বহিঃপ্রকাশ হলো মানবিক চেতনাবোধ, যা মানুষকে মহত্ত্ব করে তোলে। ফলশ্রুতিতে, সকল জীব জগতে বাঁচার এক চিলতে শীতলতার স্পর্শ অনুভব করে।
সময়ের ব্যবধানে, গ্রাম-শহর এর অঞ্চলগুলো বিশ্বায়নের ফলে পরিবর্তীত হচ্ছে। কঠিন বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে, লোচনে তর্জনীর তাক বলে দিচ্ছে অন্তরালের প্রকৃত সত্তার চিত্র! শহরে মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে কুকুর, বিড়াল, কবুতর, খরগোশ ইত্যাদি প্রাণীগুলো পুষে থাকে। নগরায়নের ফলে রাস্তায় যে সকল কুকুর, বিড়াল রয়েছে তাঁরা তিনবেলা দূরে থাক পরিপূর্ণভাবে একবেলা মনুষ্য জাতির কাছ থেকে মাছ-মাংসের কাঁটা ও হাড় পায় না। বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদির বিভিন্ন জায়গায় ডাস্টবিনের ব্যবস্থা থাকায় তাঁরা নিরবে কেঁদে ফিরে আসে ক্ষুধার তাড়নায়! তাঁরা যেন প্রতিবাদ করে তুলনা করছে, ওই ইট-পাথরের শহরে গড়ে ইমারত- এ থাকা তাদের মত জীবদের সাথে। অভিযোগ তুলছে সৃষ্টিকর্তার কাছে কেন তাদের ওদের মত বা মানুষ রূপে মায়াহীন পৃথিবীতে পাঠাননি? পরিচয়হীন, আশ্রয়হীন জীবগুলোর মানুষের মত কষ্ট, ক্ষুধা আছে, কিন্তু পূরণের অন্ন নেই! মানুষ হয়ে যদি মানবিক না হয়; মনুষ্যত্বের চেতনাবোধের কাছে অনুশোচনা না করে; তাহলে সৃষ্টিকর্তা তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হন। পৃথিবীর সকল প্রাণী সৃষ্টিকর্তারই সৃষ্টি। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে ভালোবাসলে স্রষ্টাকে ভালোবাসা হয়। তবে, গ্রামীণ জীবনে বঞ্চিত প্রাণীদের প্রতি রয়েছে অফুরন্ত ভালোবাসা। সরল জীবনযাপনের মানুষদের পরিবারের সদস্য হয়ে যায় প্রাণীগুলো। অনেকে তাদের দিকে মারতে উদ্যোত হয়; তখন তাঁরা বলে, এই খাবার, সম্পদের প্রতি আমাদেরও ভাগ আছে। আমাদের বাঁচার অধিকার আছে। একটু সময় আহাজারি জানিয়ে মাথা নিচু করে চলে যায়-এক মুহূর্তের শান্তি খুঁজতে।
প্রকৃতপক্ষে, জীবের প্রতি মানুষের চেতনাবোধ কাজ না করলে, মানবতার স্ফূরণ ঘটানো সম্ভব নয়। মানুষের অন্তরে থাকা বড় আদালত হলো বিবেক, আর পবিত্র ফুল হলো ভালোবাসা। তাই, ভালোবাসা দিয়ে সকল হিংসা, দ্বেষ, দ্বন্দ্ব দূর করে জীবের প্রতি জীবের সেতুবন্ধন করতে পারলে জগতের শান্তি। কারণ, একজন মানুষ অন্যজনের কাছে যাবে, একে-অপরকে বিপদে রক্ষা করবে, স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালোবাসবে, বন্যপ্রাণী হিসেবে কোনো জীবকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে না, অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না, সবসময় ক্ষুদ্র প্রাণীদের প্রতি সদয় হবে এমনটাই জীবের প্রতি মানব ধর্মের বানী। মানুষের মতো জীবও তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশকারীকে বিভিন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করে ঋণী করে রাখে তাকে। এভাবে, জীবের প্রতি জীবের প্রেম, ভালোবাসা, সদয় ইত্যাদি বিরাজমান থাকুক। আসুন আমরা সকল নেতিবাচক প্রভাব মুছে, বিবেকের চেতনাবোধ শক্তি প্রয়োগ করে জীবের প্রতি সচেতন হই, তাদেরকে নিজের অংশ মনে করি লালন-পালন করি, এতে স্বয়ং স্রষ্টা খুশি হবেন। কারণ, তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসলে স্রষ্টাকে ভালোবাসা হয়, তিনিও উপকারী ও বিবেকবান মানুষদেরকে ভালোবাসেন ও ভালো রাখেন।
লেখক
সুমন দাস,
সাবেক শিক্ষার্থী,
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ-৮১০০
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply