মানসিক সুস্থতায় করণীয়
ডিপ্রেশন, হতাশা, অবসাদগ্রস্থতা এখন ব্যক্তি জীবনে বেশ পরিচিত কিছু শব্দ। এগুলো খুব সাধারণ মনে হলেও স্থবির করে দেয় জনজীবন। কেননা আপনি যখন মানসিকভাবে স্থির থাকবেন না তখন আপনি কোন কাজে সঠিকভাবে মনোনিবেশ করতে পারবেন না। ফলশ্রুতিতে আপনি আরও হতাশ হয়ে পড়বেন, নিজের মনোবল হারাবেন।
কখনো কি ভেবে দেখেছেন এই অবস্থার পিছনে দায়ী কারণ কি?
অনেকগুলো কারণ এর পিছনে কাজ করে থাকে যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। তবে আপনার লাইফস্টাইল কেমন তার উপর অনেকাংশেই নির্ভর করছে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য। আপনি যদি অনিয়মিত ভাবে জীবনযাপন করে থাকেন তবে সেটা একসময় আপনাকে করে তুলবে হতাশাগ্রস্থ। এ থেকে বাঁচতে মেনে চলুন নিম্নোক্ত বিষয়গুলো –
১। পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস করুন। যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, ঘুমের সাথে কোনরকম আপোষ করবেন না। দৈনিক ৬-৮ ঘন্টার ঘুম নিশ্চিত করুন।
২। খাদ্যাভাসের ব্যাপারে সচেতন হোন। সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণের অভ্যাস করুন।
৩। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৪। যতটা সম্ভব চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
৫। প্রতিদিন নিজেকে জন্য কিছু সময় দিন। এ সময় সকল কাজকে পাশে রেখে এমন কিছু করুন যা আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দিবে।
৬। যেকোন সমস্যা নিয়ে কাছের মানুষের সাথে আলোচনা করুন।
এ তো গেলো জীবনযাপনের ধরন। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন যে আপনার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বেশ জোরালোভাবে প্রভাব বিস্তার করে। আপনি কি খাচ্ছেন না খাচ্ছেন তা শুধু আপনাকে শারীরিক ভাবে সুস্থ রাখে তাই নয়, আপনাকে মানসিক ভাবে স্থির রাখতেও কার্যকরী। আমরা যে খাবারগুলো গ্রহণ করে থাকি সেগুলো থেকে আমরা বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকি। এ উপাদানগুলো আমাদের সচল রাখতে কার্যকরী। এদের মধ্যে কিছু উপাদান সরাসরি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত।
যেমন – ভিটামিন বি১ এর অভাবে দেখা যায় মনোযোগের অভাব। ফলে আপনার কাজ মনমতো হবে না এবং আপনি হয়ে উঠবেন হতাশাগ্রস্ত।
আবার ভিটামিন বি৫ এর অভাবে আপনি হয়ে উঠবেন চাপযুক্ত, এমনকি আপনার স্মরণশক্তিতেও এর প্রভাব দেখা যাবে।
একই ভাবে ভিটামিন বি১২ আপনার মনে তৈরি করবে বিভ্রান্তি। আর যখনই আপনি কোন ব্যপারে বিভ্রান্ত হবেন তখনই আপনি নিজের অজান্তেই চাপ নিতে থাকবেন, হয়ে উঠবেন হতাশাগ্রস্ত।
ঠিক একই ভাবে ফলিক এসিড, জিংক এর অভাব দেখা দিলে আপনার মনে দেখা দিবে উদ্বেগ, হতাশা। হঠাৎ হঠাৎ মনে হবে আপনার মাথাটা যেনো একদম খালি হয়ে গিয়েছে, কোন কিছু চিন্তার শক্তি যেনো নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। সাথে দেখা দিবে ক্ষুধামন্দা ও কাজের প্রতি হয়ে পড়বেন অনুৎসাহী।
দেখছেন তো, পুষ্টি উপাদান আপনাকে মানসিক ভাবে স্থির ও প্রফুল্ল রাখতে কতটা প্রয়োজন? আর এ উপাদানগুলোর প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে প্রচুর পরিমাণে গাঢ় সবুজ ও রঙিন শাকসবজি, ফল- বিশেষত টকজাতীয় ফল, গোটা শস্য। সাথে রাখবেন দুগ্ধ্যজাতীয় খাবার, বাদাম ও বীচি জাতীয় খাবার। আর হ্যাঁ, মাছ খেতে কিন্তু ভুলবেন না। অর্থাৎ, সুষম খাদ্য গ্রহণ আপনাকে রাখবে সজীব ও প্রাণবন্ত।
মানসিক সুস্থতার ব্যাপারটা আমরা অনেক সময়ই অবহেলা করি। কিন্তু ভুলে যাই যে এ মানসিক সুস্থতা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। তাই আর অবহেলা না করে একে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করুন।
লেখক –
জিনাতুল জাহরা ঐশী
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ,
আজিমপুর, ঢাকা।
Leave a Reply