“যুগে যুগে ষড়ঋতুর ভাঁজে; প্রকৃতিতে চলে ভাঙ্গা-গড়ার খেলা,
সাদামাটা জীবনের দৃশ্য সমাদৃত;
মা-মাটি-মানুষের গল্পকাহিনীতে গ্রামবাংলা।”
মানুষের সহজ-সরল জীবনযাপন ও প্রকৃতির কোমলতা যেনো- ‘স্বর্গতুল্য’। গ্রামবাংলার মানুষ প্রকৃতির কাছেই বসবাস করে। ইট-পাথরের শহরের তুলনায় এই সাদামাটা আলয় কল্পনাতীত স্নিগ্ধ ও শীতল।
গ্রামবাংলার আঁকাবাঁকা রাস্তার দুইপাশে বৃক্ষরাজির শীতল বাতাস ও ডালে পাখির কিচিরমিচির কোলাহল এবং সূর্যীমামার উদয়ে গ্রামের মানুষের দিন শুরু হয়। শীতের সম্ভাষণে ঘাসের উপর শিশির বিন্দু; বর্ষাকালে কদম, কৃষ্ণচূড়া, কামিনী ফুলের সুভাষ-গগনে সাদা ও কালো মেঘের লুকোচুরি; শরৎকালে কাশবনের আলয় প্রতিনিয়ত এই হৃদয় ছোঁয়া চিত্র প্রকৃতি প্রেমিদের ব্যাকুল করে তোলে। অতিথি পাখিদের আনাগোনা, কৃষকদের মাঠের ফসল, নদীর ধেয়ে চলার চঞ্চলতা, পাহাড়, পর্বত সবকিছুর কোমলতা ও নিবিড়তা আজ স্বর্গের মুগ্ধতার মত গ্রামের সৌন্দর্যে প্রস্ফুটিত হচ্ছে। প্রকৃতি সদা নবীনত্ব সৌন্দর্যের জমিদারি ঢেলে দেয় গ্রামবাংলায়।
প্রকৃতপক্ষে, গ্রামের মানুষেরা ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে মিলেমিশে বসবাস করে। পুরুষেরা লুঙ্গী, জামা, প্যান্ট, পাঞ্জাবী ও নারীরা শাড়ি, সালোয়ার, কামিজ ইত্যাদি পড়ে থাকে। তাঁরা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত যেমন: কেউ কৃষক, কেউ ডাক্তার, কেউ চাকরিজীবী, কেউ গাড়ি চালক, কেউ ব্যবসায়ী ইত্যাদি। গ্রাম্য মানুষদের বাড়িগুলো বেশিরভাগ পকা ও আধা পাকা টিনের ঘর হয়ে থাকে। খেটে খাওয়া মানুষেরা জমিতে ধান, পাট, গম, শাক-সবজি; পুকুরে মাছ; খামারে গরু, ছাগল ও বাড়ির চারপাশে বিভিন্ন ফুল-ফল উৎপাদন করে থাকে। ছেলে-মেয়েরা স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। গ্রামে সাধারণত মাটির রাস্তা বেশিরভাগ যোগাযোগে ব্যবহার করা হয়, তবে কিছু গ্রামের মানুষ নৌকায়ও চলাচল করে থাকে জলাবদ্ধতার কারণে। গ্রামের মানুষেরা মূলত উদার মনের হয়, মানুষকে বিশ্বাস করে, আতিথিয়েতা পছন্দ করে, বড় কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে না।
অদ্ভূত মায়ায় জড়ানো গ্রামবাংলার প্রকৃতি ও মানুষের জীবন্ত চিত্র। বাস্তবতার নিরিখে দেখা যায়, মানুষ মানুষের জীবন নাশ করছে, সম্পত্তির জন্য মারামারি করছে ও রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করছে, যা গ্রামের নিবিড়তা ও বিশুদ্ধ বাতাসকে কলুষিত করছে। আর্থিক সচ্ছলতার সুযোগে মানুষ নির্বিচারে গাছপালা উজার করছে ও তাদের আবাসস্থল গড়ে তুলছে। ফলশ্রুতিতে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। প্রকৃতি প্রেমি এবং মানবিক মানুষদের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ থাকবে, আপনারা সবাই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন হোন ও প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য বর্ধন এবং অটুট রাখতে ঐক্যবদ্ধ হোন। তাহলে, সবুজের সজীবতায় গ্রামবাংলার অস্তিত্ব রক্ষা হবে এবং সৌন্দর্য হৃদয়ে ছন্দ ছড়াবে ও মানুষদের স্মৃতির স্মারক হয়ে থাকবে।
লেখক
সুমন দাস,
সাবেক শিক্ষার্থী,
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ-৮১০০
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply