চাকরির হাতছানি পেছনে ফেলে উদ্যোক্তা হয়েছেন ডা. মুকিত। ডা. মুকিতের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্পটা কিন্তু সহজ নাহ!
কেউ হতে চায় সরকারি বা বেসরকারী চাকরিজীবি কেউবা আবার উদ্যোক্তা। দেশে বেকারত্ব বাড়ছে দিন দিন সেটা কারো অজানা নয়। উদ্যোক্তা হয়ে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি এর একটি সমাধান হতে পারে। তেমনই একজন উদ্যোক্তা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ডাঃ মোঃ মুকিত মাহমুদ। তিনি ভেটেরিনারি মেডিসিন থেকে স্নাতক শেষ করেছেন, মাইক্রোবায়োলজি এ্যান্ড হাইজিনে স্নাতকোত্তরে অধ্যায়নরত আছেন। তরুন নবীন উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা ডাঃ মুকিত মাহমুদ দীর্ঘ দিনের কঠোর পরিশ্রম, নিরলস প্রচেষ্টা, সততা আর নিষ্ঠার দ্বারা গড়ে তুলেছেন তার নর্দান সেফ এগ্রো (NSA)।
বাংলাদেশ সারাবেলার প্রতিনিধি মোঃ মনজুরুল ইসলাম এর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় ডাঃ মুকিত মাহমুদ জানিয়েছেন তার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প, ব্যক্তিগত জীবন, পেশাগত অভিজ্ঞতা, ভবিষৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সারাবেলা : আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন আপনি?
ডাঃ মুকিত : ওয়ালাইকুমুস সালাম, আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি।
বাংলাদেশ সারাবেলা : আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনের গল্পটা বলেন?
ডাঃ মুকিত : আসলে ২০১৭ সাল থেকে আমরা ৫ বন্ধু মিলে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ফাওমি মুরগির ছোট একটি ফার্ম করি। তখন থেকেই আমি বিভিন্ন ধরনের ফার্মে নিয়মিত পরিদর্শন করতাম। একটা বিষয় আমি খুব কাছ থেকে অনুধাবন করেছিলাম এদেশে গবেষনায় কোন বড় বিনিয়োগ হয় না। বিনিয়োগ করতে সক্ষম এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে কিন্তু তারা গবেষণার বিষয়ে উদাসীন। তখন আমার মনে হয়েছে যে এমন একটা প্রতিষ্ঠান দরকার যার লাভের একটা অংশ দিয়ে ভালো মানের ফলিত গবেষনা করা যাবে। আমি যেহেতু কৃষিবিদ হবো তাই আমার প্রতিষ্ঠানটি হবে কৃষিভিত্তিক। তখন থেকেই অনেক পরিকল্পনা, অবশেষে ২০১৯ এর জানুয়ারিতে সূচনা আমার নর্দান সেফ এগ্রোর(NSA)।
বাংলাদেশ সারাবেলা : আপনার নর্দান সেফ এগ্রোর মধ্যে কি কি ধরনের প্রজেক্ট রয়েছে?
ডাঃ মুকিত : আমার নর্দান সেফ এগ্রোর মধ্যে গরুর ফার্ম, ফাওমি মুরগির ফার্ম, বানিজ্যিক পুকুর, নার্সারি পুকুর, বিভিন্ন ফলের বানিজ্যিক বাগান, ভার্মি কম্পোস্ট প্লান্ট, ছাগলের ফার্ম রয়েছে। এছাড়া দেশি ও বিদেশি ফলের উন্নত জাত সমৃদ্ধ জার্মপ্লাজম সেন্টারও রয়েছে।
বাংলাদেশ সারাবেলা : অনেক বড় একটি প্রজেক্ট, এর জন্য তো ফান্ডের প্রয়োজন, এই ফান্ড কিভাবে জোগাড় করলেন?
ডাঃ মুকিত : ব্যাংক লোন নিয়ে শুরু করা যেত কিন্তু আমি একটু অন্যভাবে চেস্টা করেছি। মূলত এই এগ্রো ফার্মে বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার কিছু একান্ত শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকমন্ডলী, বড় ভাই, আমার বন্ধু ও বান্ধবী এমনকি অনেক জুনিয়রও। আমার একজন আত্মীয়ের জমি লিজ নিয়ে এটা শুরু করেছি। সবার সম্মিলিত প্রচেস্টা ও বিনিয়োগেই এই এগ্রো ফার্মটি করা।
বাংলাদেশ সারাবেলা : ছাত্রবস্থায় এতবড় চাপ নিতে কোনো ভয় বা সমস্যার সম্মুখীন হননি কখনো?
ডাঃ মুকিত : সত্যি কথা বলতে ভয় আমি কখনোই পাইনি। সাহস নিয়ে সামনে এগিয়েছি। আমার মাথায় সবসময় ছিলো রিস্ক নিতে হবে। আর সমস্যার কথা যদি বলি, যেকোন কাজে সমস্যা থাকবেই কিন্তু সমস্যার সমাধানও তো আছে। কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে, মানুষের নানা ধরনের কথার সম্মুখীন হয়েছি তবে তা আমার বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারেনি। বাধা-বিপত্তি এসেছে কিন্তু সমাধানও হয়েছে।
বাংলাদেশ সারাবেলা : আপনার ভবিষৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে যদি বলতেন?
ডাঃ মুকিত : ভবিষৎ নিয়ে সবারই চিন্তা ভাবনা থাকে আমারও আছে। আপাতত আমার এগ্রো ফার্মকে প্রতিষ্ঠিত করা ও পাশাপাশি আমার উচ্চ শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া। সুযোগ পেলে দেশের বাইরে ভালো কোন ল্যাবে পিএইচডি করার ইচ্ছা আছে ইনশাহআল্লাহ্।
বাংলাদেশ সারাবেলা : কৃষিক্ষেত্রের ভবিষৎ সম্পর্কে আপনার মতামত?
ডাঃ মুকিত : বাংলাদেশের কৃষি সেক্টর এর উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে যদি শিক্ষিত যুবসমাজ এদিকে এগিয়ে আসে। কৃষিকে আধুনিকায়নে শিক্ষিত যুবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে ও সবাইকে কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সবাই চাকরির পিছে না ছুটে উদ্যোক্তা হলে আত্মকর্মসংস্থান হবে এতে দেশের বেকারত্ব অনেকাংশে কমবে বলে আমার মনে হয়। বাংলাদেশ যেহেতু কৃষি প্রধান দেশ তাই কৃষিই আমাদের উন্নতির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।
বাংলাদেশ সারাবেলা : নবীন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কি?
ডাঃ মুকিত : নবীন উদ্যোক্তাদের কাজ শুরু করতে হবে বাস্তবতাকে বিবেচনা করে। ফেসবুক বা ইউটিউব দেখে আবেগের বশে লাখোপতি হবার স্বপ্ন না দেখাই বুদ্ধিমানের কাজ। সবচেয়ে বুদ্ধিমান সে যে সুন্দর পরিকল্পনা করে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে বাজার-ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করে কাজ শুরু করে। আমি আগেও বলেছি চাকরির পিছে না ছুটে আপনি উদ্যোক্তা হয়ে আরেকজনকে চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করুন। এতে আপনারও মঙ্গল আর দেশেরও মঙ্গল। কৃষিখাতের ভবিষৎ উজ্জ্বল তাই কৃষিখাতে ইনভেস্টমেন্ট বাড়াতে পারলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সারাবেলা : বাংলাদেশ সারাবেলাকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ডাঃ মুকিত : বাংলাদেশ সারাবেলাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। তাদের জন্য শুভকামনা রইল।
যারা হতাসায় আছে তাদেরকে আপনার সাথে দেখা করাতে পারলে মনে হয়না তার হতাসা থাকবে, কেননা আপনি মানুষকে অনেক আন্তরিকতার সথে কথা বলেন যেটা সবাই পারেনা